সুন্দরবনের সেই বাঘটি এখন ও লোকালয়ে
সেই বাঘটি এবার সুন্দরবন থেকে প্রায় ১২কিলোমিটার দূরে লোকালয়ে দেখা গেছে। শুক্রবার (৬মে) রাতে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের পশ্চিম বানিয়াখালী গ্রামের একটি মাঠে দেখা গেছে বাঘটি । কৃষক কামাল হোসেন হাওলাদার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গরু খুঁজতে মাঠে গেলে বাঘটি তার সামনে পড়ে।
বাঘটি যেসব জায়গায় অবস্থান করেছে সেসব স্থানে স্পষ্ট পায়ের ছাপ দেখা গেছে।
রাতেই শরণখোলা থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। শনিবার (৭ মে) সকালে বন বিভাগের লোকজন এবং ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যরা সেখানে যান।এবং ওই গ্রামের বিভিন্ন ঝোপঝাড় ও বাড়ির বাগানে তল্লাশি করেন। তিন দিন ধরে বাঘটি লোকালয়ে ঘোরাফেরা করলেও এখন পর্যন্ত কোনো গবাদি পশু বা মানুষের ওপর আক্রমণ করেনি। মানুষের তাড়া খেয়ে একের পর এক স্থান পরিবর্তন করে চলেছে।
বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) রাতে ধানসাগর ইউনিয়নের বনসংলগ্ন খেঁজুরবাড়িয়া গ্রামের আবুল হোসেন খানের মাছের ঘেরের মধ্যে একটি বাঘ দেখতে পান তিনি এবং তার ছেলে শাহিন খান। তারা বাঘ দেখার বিষয়টি মসজিদের মাইক থেকে প্রচার করে গ্রামবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। সম্ভবত ওই বাঘটিই সুন্দরবনে না গিয়ে খেঁজুরবাড়িয়া গ্রাম থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের পশ্চিম বানিয়াখালী গ্রামে চলে গেছে।
এ অবস্থায় রায়েন্দা ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর, উত্তর রাজাপুর, ধানসাগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজাপুর, খেঁজুরবাড়িয়া, বাধাল নলবুনিয়া এবং খোন্তাকাটা ইউনিয়নের পূর্ব বানিয়াখালী ও পশ্চিম বানিয়াখালীসহ ৮-১০টি গ্রামের মানুষ ভীত হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ।
২নং খোন্তাকাটা ইউনিয়নের বানিয়াখালী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ছিদ্দিক গাজী জানান, তাদের গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন হাওলাদার রাতে গরু খুঁজতে বের হন। তিনি পশ্চিম বানিয়াখালী ৩৭ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে গেলে টর্চের আলোয় বাঘটি দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় তিনি চিৎকার করলে গ্রামের মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে এগিয়ে এলে বাঘটি পালিয়ে যায়। গ্রামের মানুষ হাতে টর্চলাইট এবং লাঠি নিয়ে সারা রাত গ্রাম পাহারা দিয়েছে। বন বিভাগ ও পুলিশ এসে খোঁজখবর নিয়েছে। সবার মধ্যে বাঘ আতঙ্ক দেখা বিরাজ করছে।
খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন জানান, বাঘটি সুন্দরবন থেকে গ্রামে ঢোকার পর দিগ্বিদিক হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরছে। দিনের বেলা ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থেকে রাতে বের হয়। তাই দিনের বেলায় যাতে শিশুরা বাইরে না যায় এবং বয়স্কদেরও সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। রাতের বেলায় যেন একা একা কেউ বাইরে না যায় সে ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে গ্রামবাসীকে।
শরণখোলা থানার ওসি মো. ইকরাম হোসেন জানান, খবর পেয়ে সে রাতেই পুলিশের একটি দল পশিম বানিয়াখালী গ্রাম পরিদর্শন করেছে। গ্রামবাসীকে সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বাঘটি যেকোনোভাবে বনে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে বনকর্মী এবং কমিউনিটি প্যাট্রলিং গ্রুপ (সিপিজি), ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের (ভিটিআরটি) সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। বন বিভাগের পক্ষ থেকে গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে জনসাধারণকে সচেতন করে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন