সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্মনিবন্ধন নিয়ে চরম ভোগান্তি

সবার জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কিন্তু এখনো দেশের সুবিধাবঞ্চিত বৃহৎ জনগোষ্ঠী রয়েছে নিবন্ধনের বাইরে। নানা জটিলতার কারনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্ম সনদ নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এই জন্ম নিবন্ধন সনদ পাওয়া না পাওয়ার বিষযটি প্রভাব ফেলতে অভিভাবক ও কোমলমতি শিশুদের উপর। অভিভাবকদের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক চাপে ভুগছে সাধারণ শিশুরাও।

এই মানসিক চাপ শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। সুবিধাবঞ্চিত শিশুও সুরক্ষায় জন্ম সনদের ভূমিকা শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে এসব চিত্র।

গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি সেমিনার হলে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি)। সেমিনারে শিশুদের নিয়ে কাজ করা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কমকর্তাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার শীর্ষ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আলোচনার মধ্যমে সমাধান খুঁজে প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

গোলটেবিলে বৈঠকে আলোচকরা বলেনÑসুবিধা বঞ্চিতদের জš§ নিবন্ধন করতে গিয়ে যে সকল সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা হলোÑঅনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশু বিশেষ করে পথশিশুদের বাবা-মা কিংবা অভিবাবক নেই; সেক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সনদ না থাকায় সংস্থার পক্ষ থেকে শিশুটির জন্ম সনদ করানোর ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু বস্তিবাসী এবং কর্মজীবী শিশুদের বাবা-মায়েদের বেশিরভাগেরই জন্ম সনদ নেই। আবার অনেকের জš§নিবন্ধন হাতে লেখা। সেই হাতে লেখা নিবন্ধনের বেশিরভাগই অনলাইনে নেই।

এছাড়াও অনলাইনে থাকা অভিভাবকের জš§ নিবন্ধন ভুলে ভরা। অনেক ক্ষেত্রে অনলাইনে জš§ নিবন্ধনের বাংলা এবং ইংরেজী নামের সাথে কোনো মিল নেই। অনলাইনে শিশুর জš§ নিবন্ধনের জন্য বাবা-মায়ের জš§ নিবন্ধন চায়। বাবা-মায়ের জš§ নিবন্ধনের জন্য যখন আবেতন করতে চাওয়া হচ্ছে; সেখানে তাদের বাবা-মায়ের জš§ নিবন্ধন নম্বর চায়। সেটা ছাড়া আবেদন নেয় না। অথচ বাবা-মা মারা গেছেন অনেক আগে; তাদের জš§ নিবন্ধন নেই। এসব নানা কারনে জš§ নিবন্ধন পাওয়া নিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মোতাকাব্বির আহমেদ বলেন, সবার মতামত নিয়েই জš§নিবন্ধন আইন করেছে। এই আইনের কারনে নিবন্ধন করতে গিয়ে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি হয় এবং আইন সংশোধন করা যদি প্রয়োজন মনে হয় তবে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ জোবায়দুর রহমান বলেন, জš§ নিবন্ধনকে একটি সুশক্সখল পক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও জটিলতা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আমরা সেই বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। কোনো আইনের মাধ্যমে মানুষের ভোগান্তি হোক সেটা সরকার চায় না। প্রয়োজন হলে জন্মনিবন্ধন আইনকে সংশোধন করা হবে। জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করা হবে। তবে এনিয়ে সাধারণ মানুষকেও আরো সচেতন হতে হবে।

গোল টেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুস শহিদ মাহমুদ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, বাংলাদেশ এর ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সৈয়দা মুনীরা সুলতানা, ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রটেকশন স্পেশালিস্ট জামিলা আকতার, দীপ্টত টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়াদ চৌধুরী, সেবা নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সাইদা রোক্সানা খান, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের অ্যাডভোকেসি এন্ড কমিউনিকেশন এক্সপার্ট আজমী আকতার, স্ক্যান বাংলাদেশের মহাসচিব মো. মনিরুজ্জামান, ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন, শাপলা নীড়ের কর্মসূচি কর্মকর্তা মাহফুজা পারভীন, এসওএস বাংলাদেশের উপ-পরিচালক হোসেইন আসিফ, এসওএস বাংলাদেশের কর্মসূচি কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান।

বৈঠকের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, এএসডির কো-অর্ডিনেটর, সিডিআর মো. আব্দুল করিম, এএসডির সং¶িপ্ত কার্যক্রম উপস্থাপন করেন ম্যানেজার, এম এন্ড ই লুৎফুন নাহার কান্তা, স্লাইড শো উপস্থাপন করেন ফিল্ড সুপারভাইজার সত্যব্রত দাস, কর্মশালার মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক ইউ কে এম ফারহানা সুলতানা এবং সমাপনী বক্তব্য।