সুয়েজ খালে আটকা জাহাজটি ছয় দিনেও সরেনি, তিনশ জাহাজের জট দু’প্রান্তে
মিশরের সুয়েজ খালে আড়াআড়িভাবে আটকা পড়া কনটেইনারবাহী জাহাজটি ছয় দিনেও সরানো সম্ভব না হওয়ায় তিনশ জাহাজের জট তৈরি হয়েছে দুই প্রান্তে।
বিবিসি জানিয়েছে, শনিবার ভরা জোয়ারেও এমভি এভার গিভেন নামের জাহাজটি সরানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। লোহিত সাগরের সঙ্গে ভূমধ্যসাগরকে যুক্ত করা বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এই বাণিজ্য পথ বন্ধ করে আড়াআড়ি আটকে আছে জাহাজটি।
এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সংক্ষিপ্ততম জলপথ হল সুয়েজ খাল। ১৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই জলপথে তিনটি প্রাকৃতিক হ্রদ আছে।
সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার সন্ধ্যা নাগাদ জাহাজটি চালিয়ে নেওয়ার মত সুবিধাজনক পর্যায়ে আবার ভেসে উঠতে পারে বলে তারা আশা করছেন।
৪০০ মিটার লম্বা ও ৫৯ মিটার প্রশস্ত এভার গিভেন দুই লাখ ২০ হাজার টন কনটেইনার ধারণ করতে পারে। চীন থেকে পণ্যবাহী কন্টেইনার নিয়ে পানামায় নিবন্ধিত জাহাজটি নেদারল্যান্ডসে যাচ্ছিল।
মঙ্গলবার সুয়েজ খালে ঢোকার পর ভূমধ্যসাগরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরে যায় এবং সংকীর্ণ খালে আড়াআড়ি আটক পড়ে।
ফলে খালের দুই প্রান্তে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা জাহাজের ভিড় বাড়তে থাকে। যে পরিমাণ পণ্য এখন সুয়েজের দুই পড়ে আটকে আছে, তার পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেক নৌযান ঘুরপথে আফ্রিকা হয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু তাতে সময় ও খরচ বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।
তাইওয়ান থেকে একটি জাহাজ সুয়েজ খাল হয়ে নেদারল্যান্ডসে পৌঁছাতে সময় লাগে ২৫ দিনের মত, সেখানে ঘুরপথে আফ্রিকার কেইপ অব গুড হোপ হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে সেই জাহাজের লাগবে ৩৪ দিন।
আটকে থাকা এভার গিভেন জাহাজটিকে সরাতে শনিবার প্রায় ২০ হাজার টন বালু সরানো হয়। ১৪টি টাগবোট টানাটানি করে বালুচর থেকে এভার গিভেনকে নড়ানোর চেষ্টা করে। তবে শক্তিশালী স্রোত আর বাতাসে উদ্ধার চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়। টাগবোটগুলো জাহাজটিকে দুদিকে ৩০ ডিগ্রি সরাতে সক্ষম হয়।
টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে ওই সামান্য সাফল্যই টাগবোটগুলো ভেঁপু বাজিয়ে উদযাপন করছে।
সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জেনারেল ওসামা রাবি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাহাজের তলদেশ দিয়ে পানি চলতে শুরু করেছে।
“আমরা আশা করছি যে জাহাজটি যেখানে অবস্থান করছে, সেখান থেকে যে কোনো সময় সরতে শুরু করতে পারে।”
হালকা করার জন্য জাহাজে থাকা ১৮ হাজার ৩০০ কনটেইনারের একটিও নামানোর দরকার হবে না বলেই আশা করছেন তারা।
সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তীব্র বাতাসের কারণে জাহাজটি খালের তীরের কাছে চরে আটকা পড়ে, তাছাড়া ধুলিঝড়ও তখন দৃষ্টিসীমাকে বাধাগ্রস্ত করেছিল।
তবে চেয়ারম্যান রাবি বলেছেন, আবহাওয়া ‘মূল কারণ ছিল না’। এক্ষেত্রে ‘কারিগরি বা মানুষের ত্রুটি’ ছিল বলেও তার ধারণা।
জাপানের শোয়েই কিসেন-এর মালিকানাধীন তাইওয়ানের এভারগ্রিন মেরিন এভার গিভেন জাহাজটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।
শোয়েই কিসেন-এর প্রেসিডেন্ট ইউকিতো হিগাকি শুক্রবার বলেছেন, আপাতদৃষ্টিতে জাহাজটির ক্ষতি হয়নি। ভেতরে পানি প্রবেশ করেনি। ভেসে উঠলেই এটি চলতে পারার কথা।
বিকল্প ভাবনা
ওসামা রাবি জানান, বালু সরানোর কৌশল এবং জাহাজটিকে নাড়াতে টাগবোটগুলোর চেষ্টা ব্যর্থ হলে উদ্ধারকারী দল জাহাজ থেকে কিছু কনটেইনার নামানোর পদক্ষেপ নেবে।
ইউকে চেম্বার অব শিপিং-এর প্রেসিডেন্ট জন ডেনহোম এর আগে বিবিসিকে জানান, আটকে পড়া জাহাজের কনটেইনার আরেকটি নৌযানে সরাতে হলে ভারী যন্ত্রপাতির দরকার হবে। একটি ক্রেন দরকার হবে, যার উচ্চতা ৬০ মিটারের বেশি হবে।
“জাহাজকে হালকা করার পরিকল্পনায় যেতে হলে খালটি চলাচল উপযোগী করতে সপ্তাহখানেকের বেশি সময় লেগে যাবে বলে আমাদের ধারণা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন