সেদিন যেভাবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে সুধা সদনে শেখ হাসিনা
সেদিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল সেই সময়ের বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। সেদিন ট্রাকে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। সময় তখন বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তৃতা শেষ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগোচ্ছেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির দিকে। সেই সময়েই বিষ্ফোরণ। বিকট শব্দে শেখ হাসিনার পাশেই বিষ্ফোরিত হয় গ্রেনেড।
সাধারণত এই ধরনের ট্রাকে সমাবেশগুলোতে কোনো টেবিল রাখা হয় না। কিন্তু সেদিন পেছন থেকে ধাক্কাধাক্কিতে যেন কেউ পড়ে না যায়, সেই ভাবনা থেকেই একটি টেবিল রাখা হয় ট্রাকের উপরে। সেই টেবিলটাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন রক্ষায় অনেকখানি ভূমিকা রাখে। কারণ গ্রেনেড বিষ্ফোরণ হলে ওই টেবিলের নিচেই মাথা গোঁজেন তিনি।
এরপর ক্রমাগত আসতে থাকে গ্রেনেডের আঘাত। হামলাকারীরা যখন বুঝতে পারল গ্রেনেড জখম করতে পারেনি শেখ হাসিনাকে, তখন গুলি ছুঁড়তে শুরু করে তারা। বৃষ্টির মতো গুলি আর গ্রেনেডের আঘাত যে মুহূর্তে ছুটে আসছে সেই মুহূর্তেই শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে মানবঢাল তৈরি করেছেন মোফাজ্জল হোসেন মায়া ও (প্রয়াত) মেয়র হানিফের মতো আওয়ামী লীগের নেতারা।
শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ। শেখ হাসিনাকে রক্ষার জন্য তাকে আড়াল করে দাঁড়ালে মাহবুবুর রশীদের পিঠে গুলি লাগে। মেয়র হানিফের মাথায় ঢুকে যায় অনেক স্প্লিন্টার। সেসময় মেয়র হানিফের ছেলে বর্তমান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাইদ খোকনের পায়েও ঢুকে যায় স্প্লিন্টার। আহত হন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
আওয়ামী লীগ নেতারা ও দেহরক্ষীরা দ্রুত মানবঢাল রচনা করে শেখ হাসিনাকে তার বুলেটপ্রুফ গাড়িতে তুলে দেন। সেসময় শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় পর পর ৬টি বুলেট। ভাগ্যক্রমে বুলেট থেকেও রক্ষা পান শেখ হাসিনা। গাড়িতেও একাধিক বুলেট আঘাত হানে।
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে দ্রুত মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িটিতে নিয়ে যান। গাড়িচালক মতিন নেত্রীকে নিয়ে ছুটেন ধানমণ্ডির সুধা সদনের দিকে। কিন্তু, নেত্রীর তাতে আপত্তি। তিনি এত সব রক্তাক্ত মানুষকে ছেড়ে কিছুতেই যাবেন না।
শেখ হাসিনা তখন বলতে থাকেন, গাড়ি থামাও, আমি সুধা সদন যাবো না, সবাইকে দেখে তারপর সুধা সদন যাবো।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মৃত্যুকূপ থেকে সেদিন শেখ হাসিনাকে সুধা সদনে ফিরিয়ে নিতে অনেক কষ্ট হয় সবার। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শেখ হাসিনার তখনকার নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মেজর সোয়েব, মামুন ও জাহাঙ্গীর মিলে তাকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে সুধা সদনে নিয়ে যান।
একদিকে নেত্রীর আপত্তি আর সঙ্গে রাস্তায় আবারো কোনো হামলার ভয়। শেখ হাসিনার গাড়ির চাকাও গুলি লেগে পাংচার হয়ে গেছে। কোনরকমে পিলখানা হয়ে তাকে নিয়ে সুধাসদনে পৌঁছান গাড়িচালক মতিন।
হয়তো এক কদম এদিক ওদিক হলেই গ্রেনেডটা পড়তো শেখ হাসিনার উপরে। মানবঢাল না থাকলে গুলি বা গ্রেনেডের স্পিলন্টারও লাগতে পারতো তার শরীরে। কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তবে ক্ষতি হয় শ্রবণশক্তির। বিষ্ফোরিত গ্রেনেডের বিকট শব্দ কেড়ে নেয় শেখ হাসিনার বাম কানের শ্রবণশক্তি। আর ঝড়ে যায় আইভী রহমানসহ ২৪টি তাজা প্রাণ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন