সৌদির নতুন যুবরাজকে ‘মিস্টার এভরিথিং’ বলা হয় কেন?

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বয়স মাত্র ৩১ বছর। বয়সে তরুণ হলেও সৌদি এই যুবরাজ অস্বাভাবিক ক্ষমতার অধিকারী। কূটনৈতিক অঙ্গনে তার একটি উপাধি রয়েছে। ‘মিস্টার এভরিথিং’ হিসেবেই বেশি পরিচিত তিনি।

সম্প্রতি তেল সমৃদ্ধ সৌদি আরবে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বিশাল সংস্কার পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়। এই পুনর্গঠনের পেছনে মূল কলকাঠি নাড়েন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি রাজতন্ত্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদের প্রশাসনে বেড়ে উঠেছেন তিনি।

ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে রাজতন্ত্রের পরবর্তী উত্তরসূরী হিসেবে ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স থেকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন বাদশাহ সালমান। বুধবার এক রাজকীয় আদেশে বাদশাহ ওই পদে পরিবর্তন আনেন বলে সৌদি প্রেস অ্যাজেন্সি (এসপিএ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

মোহাম্মদ বিন সালমানকে সৌদি রাজতন্ত্রের নতুন প্রজন্মের আদর্শ বাহক হিসেবে দেখা হয়। তিনি শুধুমাত্র দেশটির অর্থনৈতিক নীতি-নির্ধারণীর দায়িত্বেই নেই বরং প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবেও সামরিক দায়িত্বও পালন করছেন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা কার্নেজা এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের গবেষক ফ্রেডরিক ওয়েহরি বলেন, গত বছর তার বাবা সালমান বাদশাহ’র দায়িত্ব নেয়ার পরপরই খুব দ্রুতই নিজের প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন যুবরাজ। পাশাপাশি ক্ষমতার অস্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণও নিজ হাতে নিয়ে নেন তিনি।

পশ্চিমা এক কূটনীতিক বলেন, তিনি (মোহাম্মদ বিন সালমান) খুবই পরিচ্ছন্ন ইমেজের, খুবই বুদ্ধিমান এবং অতীতের সব যুবরাজের শীর্ষে তার অবস্থান।

দেশটির বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে তিনি মূল কর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একাধারে সৌদি অর্থনৈতিক ও উন্নয়নবিষয়ক পরিষদের চেয়ারম্যান; সৌদি এই পরিষদ গত বছর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে। রাষ্ট্রীয় জায়ান্ট তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো’র চেয়ারম্যানও তিনি।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনিই প্রথম ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের অনুমোদন দেন। ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট গত ১৩ মাস ধরে হামলা চালিয়ে আসছে। হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে পালিয়ে থাকা প্রেসিডেন্ট আব্দু মনসুর আল-হাদিকে পুনরায় ইয়েমেনের ক্ষমতায় বসাতে সৌদি জোট সানায় হামলা শুরু করে।

চলতি মাসে ব্লুমবার্গ বিজনেসউইক-এ সৌদি যুবরাজের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, তিনি দিনে ১৬ ঘণ্টা অফিস করেন। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিলের লেখা ও সান জু’র ‘দ্য আর্ট অব ওয়ার’ বই থেকে তিনি কাজের এই অনুপ্রেরণা পান। সাম্প্রতিক ওই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সৌদি এই যুবরাজ রাজ্যের বিশাল অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা ও সংস্কারের কথা জানান; দেশটিতে সরকারি কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে ঐতিহ্যগতভাবেই বিস্তারিত কথা বলতে পারেন না।

রিয়াদের কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক মোহাম্মদ বিন সালমান মাত্র একবারই বিয়ে করেছেন। সাংসারিক জীবনে তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

ওয়াশিংটনের ব্রুকিংস ইন্টেলিজেন্স প্রজেক্টের পরিচালক ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ব্রুস রিদেল বলেন, আক্রমণাত্মক ও উচ্চাভিলাষী হিসেবে সৌদির নতুন যুবরাজের ব্যাপক খ্যাতি আছে।