প্রাণঘাতি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু
মিয়ানমার সামরিক জান্তার জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে এ দেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এসব রোহিঙ্গারা বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে বর্তমানে বসবাস করছে। প্রাণঘাতি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু। অজ্ঞতা, অপরিকল্পিত থাকা, খাওয়া, পরিবেশ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে বয়োবৃদ্ধ রোহিঙ্গার পাশাপাশি শিশুরাও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ইউনিসেফের তথ্য মতে, চলমান ‘পুষ্টি সপ্তাহে’ প্রায় ২৫ হাজার শিশু প্রাণঘাতি অপুষ্টিতে ভুগছে। যাহা চলতি বছরের মে মাসের জরিপের তুলনায় দ্বিগুণ বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সরজমিন উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, ময়নার ঘোনা ও শফিউল্লাহ কাটা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ঘুরে ক্যাম্প ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, মায়েরা অসুস্থ শিশুকে কোলে নিয়ে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে।
কুতুপালং ক্লিনিকে কর্তব্যরত ডা. অজিত বড়ুয়া জানান, এসব অসুস্থ রোহিঙ্গা শিশুরা প্রসব পরবর্তী থেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর কারণ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে থাকাকালীন কোনো সুচিকিৎসা পায়নি। এখানে এসেও অপরিকল্পিত বসবাস, নোংরা-বাসি খাবার, অপরিচ্ছন্ন বসবাস, সর্বোপরি পরিবেশগত কারণে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘পুষ্টি সপ্তাহ’ উদ্বোধনের লক্ষে ১৬ নভেম্বর স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহেদ মালেক উখিয়ার বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্পে আসেন। এ সময় তিনি প্রত্যক্ষভাবে রোহিঙ্গাদের থাকা, খাওয়া ও পরিবেশ ঘুরে দেখেন।
পরে পুষ্টি সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আড়াই লাখ শিশু রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ শিশু পুষ্টিহীনতাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব শিশুদের সুস্থ করে তুলতে স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ফারিয়া সেলিম জানান, গত মে মাসের উখিয়া-টেকানাফে নিবন্ধিত ক্যাম্প, অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র, নতুন রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্রের পুষ্টি সপ্তাহ পালিত হয়। এ সময় জরিপে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৭ হাজার শিশু পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। চলতি মাসের নভেম্বর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শিশু জরিপে উঠে এসেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু মারাত্মক প্রাণঘাতি পুষ্টিহীনতার শিকার হয়ে দিন যাপন করছে। এসব শিশুদের অপুষ্টিহীনতার দুরীকরণের লক্ষ্যে ইউনিসেফে ও স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৭০টি দলের ৫৬০ স্বাস্থ্যকর্মী ৭০টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া পুষ্টি সপ্তাহ আজ রবিবার শেষ হচ্ছে এ ১১দিনব্যাপী চলমান কর্মসূচিতে ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী এক লাখ ৭৬হাজার ৭৫৬জন রোহিঙ্গা শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এ পর্যন্ত এক লাখ ১০ হাজার ৮২১ জন শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিহীনতাসহ নানা রোগ দূরীকরণের লক্ষ্যে সেবা দেওয়া হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, তাদের নিয়ন্ত্রণে সরকারি ১১টি ও বেসরকারি ৭৬টি মেডিকেল ক্যাম্পে শিশুদের পুষ্টিহীনতা দূরীকরণের জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া জানান, টেকনাফে সরকারি ছয়টি ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা পরিচালিত ২০টি মেডিকেল সেন্টার শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য কাজ করছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন