সড়কে লাইসেন্স বিহীন সব গাড়ি আটকে দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা
রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড়ের মাঝখানে জড়ো হয়ে সড়কে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেখানে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রায় পাঁচ শ শিক্ষার্থী মোড়টিতে অবস্থান নেয়।
ব্যারিকেড দিয়ে শাহবাগে ঢোকার প্রতিটি মোড়ে একটি করে লেন তৈরি করেছে শিক্ষার্থীরা। ওই মোড়ের চেক পয়েন্টে দাঁড়িয়ে একেকটি গ্রুপ হয়ে চালকের লাইসেন্স দেখছে তারা। চালকের লাইসেন্স পেলে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যেসব চালকের লাইসেন্স নেই, তাদের পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে তারা। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে।
এ সময় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) দুটি গাড়িও আটকায় শিক্ষার্থীরা। ওই গাড়ির চালকেরা লাইসেন্স বাসায় আছে জানালে তাদের লাইসেন্স নিয়ে আসতে বলে শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবর রহমানের গাড়ির চালকের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।
প্রথমে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবর রহমানের গাড়ি আটকে দেয়। এ সময় মুখ্য সচিব গাড়িতে ছিলেন না। শিক্ষার্থীরা গাড়ি আটকে চালকের লাইসেন্স দেখতে চায়। দেখা যায়, লাইসেন্সটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এরপর সেখানে কর্তব্যরত সার্জেন্ট জাফর ইমাম লাইসেন্স নবায়ন না করায় একটি মামলা করেন। জাফর ইমাম জানান, গাড়িটি ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবর রহমানের।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি পুলিশের ভ্যানও আটকানো হয়। লাইসেন্স না থাকায় মামলা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর বিজয় সরণির মোড়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে লাইসেন্স পরীক্ষা করতে তাকে। তারা প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানের লাইসেন্স পরীক্ষা করছে। মোড়ের একপাশে ট্রাফিক পুলিশ আংশিক ব্যারিকেড দিয়ে রাখছে। এতে গাড়িগুলো সারিবদ্ধভাবে যাচ্ছে। এখানে তেজগাঁও কলেজসহ, বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা অবস্থান নিয়েছেন।
সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় ও নিউমার্কেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাস্তায় বাস রেখে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বেলা পৌনে ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও নিউমার্কেট এলাকায় এসে যানবাহন থামিয়ে চালকের লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেসের কাগজ আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে থাকে। এ সময় যেসব চালকের কাছে বৈধ লাইসেন্স পাওয়া গেছে, তাঁদের ছেড়ে দেয় তারা। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজে কাজ করতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
১১টার দিকে উইনার পরিবহনের একটি বাস আটকায় শিক্ষার্থীরা। বাসটি যাত্রী নিয়ে গুলশান থেকে আজিমপুরের দিকে যাচ্ছিল। ল্যাব এইডের সামনে আসার পর শিক্ষার্থীরা বাসটি থামিয়ে চালকের লাইসেন্স দেখতে চায়। চালক বৈধ লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হলে বাসটি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। পরে বিহঙ্গ পরিবহনের আরেকটি বাস থামিয়ে চালকের লাইসেন্স দেখতে চায় শিক্ষার্থীরা। চালক লাইসেন্স দেখাতে পারেননি। তখন চালককে নামিয়ে দিয়ে নিজেরাই বাসটি ঠেলে সরিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। বাসে থাকা যাত্রীদেরও নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই বাসটি ঠেলে নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সামনে নিয়ে ব্যারিকেড দেয় তারা।
এর আগে ল্যাব এইডের ৩ নম্বর ক্রসিয়ের ট্রাফিক পুলিশ তরিকুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। বেলা পৌনে ১১টার সময় একদল শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমেছে। তারা বিভিন্ন যানবাহনের ড্রাইভিং ও ফিটনেস লাইসেন্স আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখছে। এ সময় তাদের কোনো ধরনের বাধা দেয়নি ট্রাফিক পুলিশ।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে টানা চার দিন ধরে ঢাকায় ছাত্র বিক্ষোভ হচ্ছে। ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে গত রোববার জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন