হতভাগ্য এক পিতার পূত্রের নিকট কৈফিয়ত

প্রিয় শুদ্ধ, তোমার যমজ ভাই যখন মায়ের পেটের মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে মারা যায় তখনও তুমি বেচে ছিলে বাবা-মা এর কোল পূর্ণ করতে। ০৯/১২/২০১৫ ইং রাত ৭:৩০ মিনিট এ ডেলিভারি টেবিল হতে সোজা এনআইসিও তে ৪ টা খিচুনির মেডিসিন আর ভেন্টিলেটরে ৪৩ দিন যম মানুষের লড়াই শেষে মায়ের কোলে এসেছিলে।

একফোঁটা মায়ের বুকের দুধ না পেয়েও বাবা মায়ের সাথে থেকেছ। ৫ বার দিল্লিতে চিকিৎসার চেষ্টা আর দেশে ৪ টা খিচুনির মেডিসিন প্রতিদিন নিয়েও আমাদের আনন্দ কষ্টের সাথি ছিলে।

তুমি তোমার ভাষায় মা বা দাদু দিদুর সাথে কথা বললেও আমার মনে হত তুমি আমাকে বাবা ডাকতে না বলে আমার কষ্ট হত। তোমার খাবার খেতে গেলে প্রচুর কাশি হত, তাই সারাদিন নিজেকে ব্যস্ত রাখতাম অন্যের বাচ্চার দেখভালে। সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়ে মেডিসিন খেতাম, এর মাঝেই এমডি (শিশু) পাশ করলাম। আসলে সেরেব্রাল পলসি আক্রান্ত শিশুর বাবা মা হওয়া এত সহজ না।

আমি সহ পরিবারের অনেকের কাছেই তুমি ছিলে অনাহূত।তোমার দিদু যদি চাকুরি না ছেড়ে তোমার টেককেয়ার না করতেন তবে আমি বা তোমার মা চিকিৎসা পেশায় থাকতে পারতাম না।আমি কোন ভাষাতেই তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দূসাহস দেখাতে যাব না। তুমি একা শুয়ে খেলতে চাইতে না, চাইতে কোলে থাকতে। আমি বিরক্ত হলেও তোমার মা আর দিদু কখনও হতেন না।

তোমার মাকে অনেক সময়ে বুঝতে পারতাম না, এ আমার একান্ত ব্যার্থতা।আমি তোমার যমজ ভাইকে পারি নাই শ্মশানে নিতে, তোমার বোনকে ও পারিনি। কিন্তু আজ পেরেছি তোমাকে নিজে হাতে করে ফ্রিজিং কারে উঠায়ে দিতে।

মাঝে মাঝে মনে হত আমার একটা মেয়ে থাকলে ভাল হত, কিন্তু এখন আর কোন আফসোস নেই জান। তুমি ঘুমাতে বাবা-মা দিদুর বুকের উপর উপূর হয়ে।
আমি চেম্বার এ যখন সুস্থ শিশু দেখে এসে তোমার খাওয়ার জন্য কষ্ট দেখতে না পারতাম। শেষের দিকে তোমাকে জোর করে এনজি টিঊবে খাওয়ানোর জন্য টিউব পরাতে গেলে তুমি খুব রাগ করতা। পারবা বাবাকে ক্ষমা করতে ?

শিশু হাসপাতালে আইসিইউতে তুমি ৮ দিন যে লড়াই করেছ, এটা অবিশ্বাস্য। আমি পারিনি তোমার ভাল বাবা হতে, পচা বাবা হিসেবে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
নিজ হাতে তোমার লাইফ সাপোর্ট খোলার অনুমতি দিলাম, কারন তুমি এবার আমার সাথে রাগ করে এসেছ বাসা থেকে ফিরবে না বলে। প্লিজ আমাকে ভুল বুঝনা।
আজ ২৭/০৫/২৩ ইং দুপুর ১:২০ মিনিটে তুমি আমাদের মুক্ত করে গেলে, আসলে আমি তোমার মায়ার বাধনে বাধা পড়েছি। আমি তোমার নাম কখনও ভুলব না, ভুলতে দিব না।

লেখক:বাবা,
ডাঃ রতন কৃষ্ণ সাহা
এমবিবিএস,এমডি(শিশু),বিসিএস(স্বাস্থ্য) ও কনসালটেন্ট(শিশু)।