হাইস্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বড় ধরণের সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্যে আছে
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে স্নাতক পাশ করা এবং স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে খুব খারাপ একটি পর্যায়ে আছে। তারা এখন পরিপক্ব এবং জীবনকে কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় সেই চিন্তায় আছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে সংসার, বিয়ে-শাদী, চাকরী ইত্যাদি চিন্তা চলে আসে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে যখন তাদের লক্ষ তারা নির্ধারণ করতে পারছে না, কিংবা সেই লক্ষে আদৌ পৌঁছাতে পারবে কিনা এই রকমের দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার ফলে তাদের মানসিক অবস্থা খুব খারাপ একটি পর্যায়ে আছে। অন্যদিকে যারা স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপভোগ করার মনোভাব নিয়ে আসে তারা একটি বড় মানসিক ধাক্কা খায়। এর ফলে তাদের মাঝে সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে এবং তারা মাদকাসক্ত, প্রেমাসক্ত সহ বিভিন্ন রকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় দেশের এখন অন্যতম প্রধান সঙ্কট হিসেবে দাঁড়িয়েছে স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামাজিক অবক্ষয় সহ নানাবিধ বিষয়। শিক্ষার্থী সহ তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ ঝুঁকে পড়ছে টিকটক, লাইকি, পাবজি, মাদক সহ বিভিন্ন আসক্তিতে। নতুন প্রজন্মকে এই সঙ্কট থেকে কীভাবে উত্তরণ পাওয়া যাবে?ছোট বাচ্চা যারা প্রাইমারীতে পড়ে এরা সম্পূর্ণরূপে পড়ালেখা ভুলে গেছে। এমনি তারা শিক্ষার্থী কিনা সেটাও তারা ভুলে গেছে। তবে ইন্টারনেট, গেম এগুলো থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং বললেই এরা স্বাভাবিক অবস্থানে চলে আসবে। খুব একটা সমস্যা এদের ক্ষেত্রে হবে না। কিন্তু যারা হাইস্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা একটি ব্যাপক সমস্যার মধ্যে আছে। কারণ, এই সময়ে এদের যে একটি শারীরিক পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তন এবং যে সুযোগ এখন পাচ্ছে এর অপব্যবহার করে তারা বিভিন্ন মাধ্যমে অশ্লীল এবং অনৈতিক পথে অগ্রসর হয়। এই ক্ষেত্রে তাদের একটি বড় ধরণের আসক্তি তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি এই গ্রুপটি আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত হয়ে আরো বিভিন্ন ধরণের অপরাধ যেমন মাদক, ইভটেজিং, কিশোর গ্যাং সহ নানাবিধ অপরাধে যুক্ত হয়ে পড়ছে। মূলত হাইস্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরাই এই মারাত্মক সঙ্কটে রয়েছে। এখান থেকে বের হয়ে আসা তাদের জন্য অনেক কঠিন হবে।
তরুণ সমাজের এই সামাজিক অবক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় কি? শিক্ষার্থীদের একেবারে গেমস, ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন আসক্তি থেকে দূরে রাখা যাবে না। এতে তাদের ওপর মানসিক চাপ পড়বে। শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে এসবের থেকে দূরে রাখতে হবে। এছাড়া মানসিক প্রশান্তির জন্য সারাদেশের বিভিন্ন স্কুলে বড় বড় মাঠ আছে সেখানে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের ঘোরাঘুরি করা, খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে। পাশাপাশি পিতামাতা তাদের বাহিরে নিয়ে যাবে। তাদের অন্যান্য কাজে ব্যস্ত করে এসব আসক্তি থেকে আস্তে আস্তে দূরে আনতে হবে।
তরুণ প্রজন্মের এই অবক্ষয় রোধে সকলকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা করতে হবে। শিক্ষকরা মাঝে মাঝে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং করতে পারেন। শিক্ষকদের একটি সম্মানের জায়গা আছে শিক্ষার্থীদের কাছে। যে শিক্ষক বুঝতে পারেন যে এই কয়জন শিক্ষার্থী তাকে পছন্দ করে তার উচিৎ সেই শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ভালো পরামর্শ দেয়া। এর ফলে তার ওপর একটি সুস্থ মানসিক প্রভাব পড়বে। শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার প্রথম শিক্ষা হয় পরিবার। তাই পরিবারকেই এই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।কিশোর গ্যাং এর তরুণ সমাজের অবক্ষয়ের একটি বড় উদাহরণ এবং এটি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বন্ধু-বান্ধব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বন্ধু-বান্ধব নানাভাবে সংঘটিত হয়ে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িতে হয়ে পড়ে। তবে চাইলেই এটি সহজভাবে সমাধান করা যেতে পারে। কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে সরকার মহল্লাভিত্তিক কিশোরদের একটি তালিকা খুব সহজেই প্রণয়ন করতে পারে। সেই তালিকারভিত্তিতে সমাজের বিশিষ্টজনেরা তাদের সামাজিক অপরাধ থেকে দূরে থাকার জন্য পরামর্শ দিবে, পরিবার তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবে। সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা করলেই এই সঙ্কট থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে আমি মনে করি।
লেখকঃ
শ্যামল শীল,
ইতিহাস বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন