হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু দিয়ে হাল চাষ

এক সময় গ্রাম বাংলার কৃষিকাজের অবিছেদ্য অংশ ছিল গরু-মহিষ দিয়ে হাল চাষ। কৃষকের কাঁধে লাঙল-জোয়াল, গরুর দড়ি ধরে জমিতে চাষ করার দৃশ্য ছিলো চিরচেনা। তবে আধুনিক যান্ত্রিকীকরণের ফলে সেই ঐতিহ্যবাহী দৃশ্য এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের কৃষক সোহরাব আলী (৫৮) দীর্ঘদিন ধরে গরু দিয়ে হাল চাষ করে আসছেন। তিনি জানান, ৮ কাঠা জমি চুক্তিতে ৮০০ টাকায় হাল চাষের কাজ নিয়েছি। কাজ শেষ করতে প্রায় ২ ঘন্টা সময় লাগতে পাড়ে। এখন গরু দিয়ে হাল চাষের চাহিদা প্রায় নেই বললেই চলে। নিজের কোন জমি নেই , তাই মানুষের ১০ কাঠা জমি চুক্তিতে নিয়ে আবাদ করি। অন্য কোন কাজও পারিনা তাই বাধ্য হয়েই এই পেশা ধরে রেখেছি।

তিনি আরও বলেন, গরু পালন করাও এখন ব্যয়বহুল। দুইটি হালের গরুর দাম ২ লাখ টাকা। এর সঙ্গে ভুষি, ফিড, খড়, ঘাসের মতো খাদ্য সামগ্রীর দামও বেড়েছে। যেখানে ট্রাক্টর দিয়ে এক বিঘা জমি আধা ঘন্টায় ৬০০ টাকায় চাষ করা যায়, সেখানে গরু দিয়ে চাষ করতে ৬-৭ ঘন্টা লাগে এবং খরচ পড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা।

একই ইউনিয়নের জমি মালিক মোঃ মকবুল হোসেন (৪৫) বলেন, আমার উঁচু- নিচু জমি ও নদীর ধারের জমিতে ট্রাক্টর পৌঁছানো কঠিন, তাই গরু দিয়ে হাল চাষ করি। এছাড়া গরু দিয়ে চাষ করলে জমির ঘাস কাঁদার নিচে পড়ে যায়, যা পচে জমির উর্বরতা বাড়ায়। কিন্তু ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করলে ঘাস উপরে ভেসে থাকে এবং ঘাস মারার বিষ দিয়েও পুরোপুরি ঘাস মারা যায়না, ফলে বাড়তি খরচ হয়।

বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, যদিও যান্ত্রিক চাষে উৎপাদন দ্রুত হয়, তবু প্রাকৃতিক পদ্ধতির উপকারিতা উপেক্ষা করা যায়না। গরু দিয়ে চাষ করলে মাটির গভীর অংশ আলগা হয়, গরুর পায়ের চাপে কাদা তৈরি হয় এবং গোবর জমির উর্বরতা বাড়ায়। এছাড়া গরু এবং লাঙল জমির আইলের পাশের জায়গাটাও ভালোভাবে চাষ করা যায়। যা ট্রাক্টর দিয়ে সম্ভব নয়। জমির কোনা গুলো ফাঁকা থাকলেও গরুর লাঙল দিয়ে চাষ করলে তা পূরণ করা সম্ভব।

সোহরাব আলীর মতো কিছু মানুষ এখনো জীবিকার তাগিদে এই ঐতিহ্যবাহী গরু দিয়ে হাল চাষ পদ্ধতি ধরে রেখেছেন, যা কৃষি ঐতিহ্য সংরক্ষনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।