হাসির মহামারি: আক্রান্তরা টানা ১৬ দিন ধরে শুধু হেসেছিলেন!

বিশ্বজুড়ে এখন চলছে করোনা মহামারি। প্রতিদিনই এ মহামারিতে আক্রান্ত হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ। এছাড়া আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই ঝরছে কয়েক হাজার প্রাণ। কিন্তু মহামারি যে শুধু রোগ থেকে হয় এমনটা নয়। হাসি থেকেও মহামারি সৃষ্টি হতে পারে-এটা হয়তো অনেকেরই অজানা।

হাসি মানে খুশি এ কথাটা সব সময় ঠিক নয়। হাসি কিন্তু একটি অসুখও। আর এই হাসি একবার মহামারি আকার ধারণ করেছিল। ১৯৬২ সালে পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার কাশাশা গ্রাম আক্রান্ত হয়েছিল এ হাসির মহামারিতে।

একের পর এক মানুষ বিনা কারণেই যেন হেসে খুন! এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল যে সামনে কাউকে হাসতে দেখে উপস্থিত সবাই হাসতে শুরু করছিলেন। কেউই যেন হাসি থামাতে পারছিলেন না।

এ মহামারি বিশ্বজুড়ে পরিচিত ‘টানগানইকা লাফটার এপিডেমিক’ হিসেবে। তানজানিয়ার আগে নাম ছিল টানগানইকা। সে সময় জাঞ্জিবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল তানজানিয়া। উগান্ডার সীমান্তে অবস্থিত তানজানিয়ার ওই গ্রামের একটি স্কুল থেকে শুরু হয় এ মহামারি।

১৯৬২ সালের ৩১ জানুয়ারি কাশাশার একটি বোর্ডিং স্কুলের তিন ছাত্রীর মধ্যে প্রথম এই সংক্রমণ দেখা যায়। তারা বিনা কারণে হাসতে শুরু করে। তাদের থেকে দ্রুত স্কুলের বাকি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।

ওই স্কুলের অন্তত ৯৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। যাদের বয়স ছিল ১২ থেকে ১৮ বছর। তবে ওই স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে বা অন্যান্য কর্মীদের মধ্যে এ সংক্রমণ ছড়ায়নি। শুধু ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছিল রোগটি। সে সময় সংক্রমণ আটকাতে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

পরে ওই স্কুল থেকে সেখানকার নসাম্বা নামে একটি গ্রামের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে রোগটি। জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এ রোগটিতে ৪-৫ মাসের মধ্যে ২১৭ জন আক্রান্ত হন।

এরপর মে মাসের ২১ তারিখে কাশাশা গ্রামের স্কুলটি ফের চালু করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যেই তা আবারও বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশের গ্রাম বুকোবার কাছে আরও একটি স্কুলেও রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। সেই স্কুলের ৪৮ জন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়।

যারা আক্রান্ত হয়েছিল তারা টানা ১৬ দিন ধরে শুধু হেসেছিলেন। এভাবে ১৮ মাস চলতে থাকে হাসি। পরে হঠাৎ করে আর কারও মধ্যে অকারণে হাসির লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না। তখন শুরু হয় অন্য এক সমস্যা, ভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে।

আক্রান্তরা জ্ঞান হারানো, শ্বাসকষ্ট, শরীরে র‌্যাশ হওয়া, হঠাৎ হঠাৎ কেঁদে ওঠা, পরক্ষণেই আবার ভয়ে আর্তনাদ করা হাসি দিতে থাকে। এ সমস্ত লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। তবে এই রোগে কারও মৃত্যু সংবাদ পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে তানজানিয়ার মোট ১৪টি স্কুলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং এক হাজার জন সংক্রমিত হয়।

ইন্ডিয়ানার পারডিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক পরে এই রোগ কী এবন কেন সেটি ছড়িয়ে পড়েছিল তানজানিয়ায় তার কারণ সামনে আনেন। তারা গবেষণা করে দাবি করেন, মনের ওপর অত্যধিক চাপের কারণেই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।

ওই সময় দেশটি মাত্র স্বাধীন হয়েছিল। স্বাধীনতা আনন্দের ও চাপমুক্তির। কিন্তু দেশের শিক্ষার্থীদের ওপর খুব মানসিক চাপ বেড়ে গিয়েছিল সে সময়। কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতি আশা বেড়ে গিয়েছিল অভিভাবক ও শিক্ষকদের। সে কারণেই মূলত শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল বলে মনে করা হয়।