১০ অক্টোবর চলবে ঢাকা-ভাঙ্গা ট্রেন , যশোর যাবে আগামি জুনে
পদ্মা সেতু হয়ে আগামি অক্টোবরেই ঢাকা থেকে ট্রেন যাবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। আগামি ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্পের ট্রেন চলাচল। উদ্বোধনের দিন সুধী সমাবেশও হওয়ার কথা রয়েছে। তবে উদ্বোধনের আগে ৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলক একটি ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য রেলের দুই অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কাছে চিঠি দিয়ে পরীক্ষামূলক চলাচলের জন্য একটি ট্রেনও চেয়েছেন পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের পরিচালক। এর মাধ্যমে ঢাকা-ভাঙ্গা ৮২ কিলোমিটার নতুন ব্রডগেজ রেলপথ যুক্ত হবে দেশের রেল যোগাযোগে। আর আগামি বছরের জুন নাগাদ প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ে যশোর পর্যন্ত যাবে ট্রেন।
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আগামী ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী একটি সম্ভাব্য তারিখ দিয়েছেন ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ উদ্বোধনের জন্য। কারণ, প্রধানমন্ত্রী ১৭ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বাইরে থাকবেন। সুধী সমাবেশ করেই উদ্বোধন হতে পারে। তবে সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনা চলছে।’
আগামি ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালাতে দুই অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কাছে চিঠি দিয়েছেন পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের পরিচালক। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘টেস্ট রানের (পরীক্ষামূলক চলাচলের) জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি নতুন একটি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন), একটি পাওয়ার কার (ডব্লিউপিসি), শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাইনিং কার ও গার্ড ব্রেক (ডব্লিউজেডিআর), শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার (ডব্লিউজেসি), ২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার (ডব্লিউজেসিসি) এবং একটি শোভন চেয়ারকোচ (ডব্লিউইসি) ক্যারেজের প্রয়োজন। এই ৭টি ক্যারেজ দিয়ে রেক তৈরি করে একটি ট্রেন ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছানো প্রয়োজন। লোকোমোটিভসহ ক্যারেজগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্রু এবং গার্ড নিয়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’
পরীক্ষামূলক চলাচলের ওই ট্রেনের যাত্রী হবেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এবং রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এছাড়া কয়েকজন সংসদ সদস্যরাও থাকবেন এই ট্রেন যাত্রায়।
ঢাকা-পদ্মা সেতু-ভাঙ্গা রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর জন্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান অনুমতি দিয়েছেন। এর আগে পদ্মা সেতুতে পাথরবিহীন রেললাইন বসানো শেষ হলে চলতি বছরের ৪ এপ্রিল ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মাওয়া রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়। এবার পুরো পথে পরীক্ষামূলক চলবে ট্রেন।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, `আগামি ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক রেল চালুর সব প্রস্তুতি রয়েছে। ৩টি স্টেশন এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বাকিগুলোর কাজ চলছে। শুরুতে একটি ট্রেন নিয়মিত চলবে।’
ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে নতুন রেললাইন কেরানীগঞ্জ হয়ে উড়ালপথে পদ্মা সেতুতে মিলেছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইন ধরে কমলাপুর থেকে গেন্ডারিয়া হয়ে ভাঙ্গায় ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
গত ৪ এপ্রিল ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চালু হয়। তবে এরপর এতদিনেও ঢাকা থেকে ভাঙ্গা ট্রেন চলাচল না করার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘ট্রেন চালাতে এই পথে গেন্ডারিয়া ও কেরানীগঞ্জ স্টেশনে কিছু টার্ন আউটের (এক রেলপথ থেকে আরেক রেলপথে ট্রেন যাওয়ার পথ) কিছু কাজ বাকি ছিল। সেগুলো শেষ করেই এবার ঢাকা-ভাঙ্গা অংশ ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’
বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী মাসেই প্রধানমন্ত্রীর (ঢাকা-ভাঙ্গা ট্রেন চলাচল) উদ্বোধন করার কথা। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার এক সপ্তাহ পরই বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা-ভাঙ্গা ট্রেন চলাচল করবে।’
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ৪ মে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। এ ছাড়া ৪৩ কিলোমিটার লুপ লাইন (স্টেশনের আগে-পরে বাড়তি লাইন) নির্মাণসহ নতুন ট্রেন চালুর জন্য ১০০টি আধুনিক যাত্রীবাহী বগি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই পথে ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যে কোনো রেলক্রসিং রাখা হয়নি। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত আগের ৬টিসহ ২০টি আধুনিক স্টেশন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। পরে বেড়ে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকায়।
চীনের অর্থায়নে জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিআরইসি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ২৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। বাকি অর্থ ব্যয় করছে বাংলাদেশ সরকার। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের জুন মাসে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে ৭ জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে ৫ জোড়া ট্রেন চলবে। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব বলে ধরা হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর সড়ক পথ সাধারণ জনগণের জন্য খুলে দেওয়ার পর থেকে রেলওয়ে বাড়তি গুরুত্ব দেয় মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের কাজে। এরপরও ঢাকা থেকে যশোর অংশের কাজ শেষ করতে না পারায় পুরো পথের পরিবর্তে প্রথমে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘স্টেশনগুলোর কাজ চলছে। উদ্বোধনের তিন মাসের মধ্যে প্রধান প্রধান স্টেশনগুলো চালু হয়ে যাবে। তখন ট্রেনের সংখ্যাও বাড়বে। আগামী বছর যশোর পর্যন্ত রেল চালুর লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে।’
এসব বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আগামী বছরের জুন মাসেই (পদ্মা সেতু হয়ে) ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেল চলাচল করবে। প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা সেটা চালু করার চেষ্টা করবো।’
নতুন করে প্রকল্প ব্যয় বাড়বে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্পের ব্যয় যা ধরা আছে সেটাই থাকবে। ব্যয় বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন