২০০৭ সালের পর শুধু লসই দিচ্ছে বিমান : বিমানমন্ত্রী
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল।
তিনি বলেছেন, মঙ্গলবার পরিচালনা পর্ষদ সভায় বিমানের ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে পুনর্নিয়োগ করা হয়েছে- আমি জানি না। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে?
মন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি বিমানমন্ত্রী। কিন্তু আমি বাংলাদেশ বিমানের মন্ত্রী না। আমি হচ্ছি বেসরকারি যারা, রিজেন্ট আছে, ইউএস-বাংলা আছে, নভো, ইন্ডিগো, আমি তাদের মন্ত্রী।’
তিনি বলেন, বিমানে টিকিট নিয়ে যা হচ্ছে তা এখন আর চুরির পর্যায়ে নেই। এটা ডাকাতির পর্যায়ে চলে গেছে। ২০০৭ সালের পর থেকে বিমান শুধু লসই দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে তাকে বিমানে কি হচ্ছে সবই জানানো হবে। বিমানের টিকিট চোরদের ধরা হবে। শিগগিরই বিমানকে কলঙ্কমুক্ত করা হবে।
রাজধানীর একটি হোটেলে বুধবার এভিয়েশন অ্যান্ড টু্যরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি) আয়োজিত ‘ফ্লাইট সেফটি : দ্য ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় মন্ত্রী এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম নিয়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। শাহজাহান কামাল বলেন, ‘আমি দুঃখ প্রকাশ করছি বিমানের কার্যক্রম নিয়ে। তারা এগোতে পারছে না। অথচ অন্য এয়ারলাইন্সগুলো ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে। ক’দিন আগে আমার সঙ্গে কাতার এয়ারলাইন্সের লোকজন দেখা করেছিলেন। তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, তাদের পপুলেশন কত? তারা জানালেন ২৭ লাখ। কিন্তু তাদের এয়ারক্রাফটের সংখ্যা প্রায় ১৪৬টি। অথচ ছোট্ট একটা দেশ, তারা এত উন্নত হতে পেরেছে। আর আমরা, বাংলাদেশ বিমান এত পেছনে পড়ে কেন? আমরা কেন এগোতে পারছি না?’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা বীরের জাতি। আমি সরকারের লোক, সরকারি দলের প্রতিনিধি। আমি দেখেছি, এভিয়েশন খাতে আমাদের প্রাইভেট সেক্টরে যারা, তারা ভালো করছেন। ইউএস-বাংলার অ্যাকসিডেন্টের বিষয়ে এখন তো বলতে পারব না কার দোষ। ইনকোয়ারির পর আমাদের কাছে রিপোর্ট আসবে। নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি এ মুহূর্তে বলতে পারি না। ইনকোয়ারির পর যেটা আসে, সেটাই করব।’ অ্যাকসিডেন্ট তো হবেই। ট্রেনও অ্যাকসিডেন্ট হয়।’
শাহজাহান কামাল আরও বলেন, বলা হয়েছে- শাহজাহান খান হলেন লঞ্চেরমন্ত্রী, পানিরমন্ত্রী, নৌপরিবহনমন্ত্রী, আর আমি হলাম আকাশমন্ত্রী। আমাকে বিমানমন্ত্রী বলা হয়। কিন্তু ২০০৭ সালে বিমান কোম্পানি হয়, প্রাইভেট সেক্টর বলা চলে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি করে দেয়া হয়েছিল। কেন করে দেয়া হয়েছিল, সরকারের যখন এটা চালানোর সক্ষমতা নেই, কিন্তু আপনারা (অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিমান কর্মকর্তা) তো সেটা দেখাতে পারলেন না। ২০০৭ সালের পরে আজকে ২০১৮ সাল, এখন পর্যন্ত শুধু লসই দিচ্ছেন। টিকিটের জন্য গত সপ্তাহেও আমাকে বলা হয়েছে। আপনাদের কাছে টিকিট আছে, আপনারা প্যাসেঞ্জারকে বলেন যে, টিকিট নেই। এই যে চুরি, এই যে ডাকাতি, এটা কেন হচ্ছে। এর জন্য কারা দায়ী? আমার কাছে গতকাল (মঙ্গলবার) একজন প্যাসেঞ্জার বলেছেন, উনি (প্যাসেঞ্জার) লন্ডনে যাবেন। উনি টিকিট চেয়েছেন, কিন্তু টিকিট নেই। পরে আকাশে উড়ার আগে একজন প্যাসেঞ্জার বললেন, বিজনেস ক্লাসের ছয়টা সিট খালি আছে। এটা জাতির জন্য বিশ্বাসঘাতকতা। এটা মোনাফেকি, এ দুর্নীতি কেন হচ্ছে।’
বিমানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাকে বিমানমন্ত্রী বলা হয়। আমি দুঃখের সঙ্গে বলি, আমার কী দায়িত্ব আছে। গতকাল (মঙ্গলবার) বিমানের ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে পুনর্নিয়োগ করা হয়েছে কিন্তু আমি জানি না। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে? একবার আমাকে জিজ্ঞাসা করলে অন্তত আমার স্যাটিসফেকশন হতো। ১০ বছর করুক, আমাকে তো জিজ্ঞাসা করা হয়নি। আমি বিমানমন্ত্রী, আমি বাংলাদেশ বিমানের মন্ত্রী না। আমি হচ্ছি বেসরকারি যারা, রিজেন্ট আছে, ইউএস-বাংলা আছে, নভো, ইন্ডিগো, আমি তাদের মন্ত্রী। এটা শুনলে প্রধানমন্ত্রী হয়তো আমার ওপর রাগ করতে পারেন। তারপরও প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে তাকে আমি সব জানাব।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন বিভাগের পরিচালক উইং কমান্ডার চেৌধুরী জিয়াউল কবির, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব) সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিও) হানিফ জাকারিয়া, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোমিন, পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন প্রমুখ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন