২০১৮ সালের মধ্যে শেষ হচ্ছে না পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ
২০১৮ সালের মধ্যে কোনোভাবেই পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন এ সেতু নির্মাণে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ও ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইইবি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এম শামীম জেড বসুনিয়া।
তিনি বলেছেন, ‘যে যাই বলুক ২০১৮ সালে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে না। তবে পুরোপুরি না হলেও ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ ওই সময়ের মধ্যে শেষ হবে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি গিয়ে এটি শেষ হতে পারে।’
“তবে এ নিয়ে সরকারের সমালোচনা করার কিছু নাই। কারণ সরকার ও সংশ্লিষ্টদের নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই। সবাই চায় পদ্মাসেতু হোক।”
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘নিরাপদ নির্মাণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানী’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠাণে বক্তৃতায় এম শামীম জেড বসুনিয়া এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর অন্যতম এ প্রকল্প নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে। ২০১৮ সালে এই সেতুতে ট্রেন এবং যানবাহন চলবে।
২০০৯ সালে পদ্মাসেতু প্রকল্পের কারিগরি বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্ব একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগ করে সরকার। ১০ সদস্যের ওই কমিটিতে জাপানের তিনজন, নেদারল্যান্ডসের একজন এবং নরওয়ের একজন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। বাকি পাঁচজন বাংলাদেশের।
এ কমিটির অন্যতম সদস্য বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক শামীম জেড বসুনিয়া অনুষ্ঠানে যখন বক্তব্য রাখছিলেন; তার পাশেই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
ওই অনুষ্ঠানের পর ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ কেন হবে না- এমন প্রশ্নের জবাবে শামীম জেড বসুনিয়া বলেন, নদীতে স্রোত খুব বেশি। পাইল করা যাচ্ছে না। পদ্মায় মোট ৪০টি পেয়ার আছে। প্রতিটি পেয়ারে থাকছে ছয়টি করে পাইল আছে। এগুলো ১১০ থেকে ১১৫ ফিট গভীরে স্থাপন করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে পদ্মার মাওয়া অংশে পানির গভীরতা বেশি। গত ডিসেম্বরে পানির গভীরতা ১০০ ফিটের বেশি হয়েছিল। এই জন্য বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়াও অন্য সবকিছু প্রায় প্রস্তুত।
৭০ থেকে ৮০টা পাইল করতে সময় একটু বেশি লাগবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্রোতের কারণে পদ্মার প্রায় ১৪টি পেয়ার পুরোপুরি নির্মাণ পিছিয়ে যাবে। একটি পিয়ারের আমরা হিসাব করে দেখেছি, সব মিলিয়ে ৮৪টি পিলার নির্মাণ পিছিয়ে যাচ্ছে। দুই পাশেই মোটামুটি কাজ প্রায় প্রস্তুত। কিন্তু মাঝখানে খালি পড়ে আছে। নদীর অত্যধিক স্রোতের জন্যই কাজের বেঘাত ঘটছে।
প্রায় ৪০ বছর ধরে বুয়েটে শিক্ষকতা করা এই প্রকৌশলী জানান, বাংলাদেশ সরকার ও চীনের রাষ্ট্রপতিও চাইছিলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে যেন নির্মাণ শেষ করতে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের শত আন্তরিকতার পরেও ২০১৯ সালের আগে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হবে না।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৮ সালে পদ্মা নদীতে সেতু নির্মাণের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমীক্ষা যাচাইয়ের পর ২০০১ সালের ৪ জুলাই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এরপর অর্থের জোগান না হওয়ায় সেতুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে।
২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বব্যাংক সেতু নির্মাণে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১২ সালে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। অনিশ্চয়তায় পড়ে সেতু নির্মাণের ভবিষ্যৎ। তবে বিশ্বকে অবাক করে বর্তমান সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় ২০১৩ সালে।চ্যানেল আই অনলাইনের সৌজন্যে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন