২১ আগস্ট : গ্রেনেড গর্জনে কেঁপে ওঠা এক বর্বরোচিত দিন

বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ আগস্টের পর আরেকটি বর্বরোচিত ঘটনার সাক্ষী ২১ আগস্ট। এই দিনে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। নিহত হন আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা-কর্মী। ভয়াল সেই দিনটির ১৪তম বার্ষিকী আজ। নারকীয় ওই হামলায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় আসছে সেপ্টেম্বরে।

২১ আগস্টে ঘটনাস্থলে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে মিছিল করতে চেয়েছিলো তৎকালীন বিরোধী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মিছিল শুরুর আগে বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আয়োজিত সমাবেশে ট্রাকের ওপর করা অস্থায়ী মঞ্চে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য তখন শেষের দিকে। হঠাৎই রাজপথে গর্জে ওঠে যুদ্ধক্ষেত্রের গ্রেনেড। স্প্লিন্টারে ছিন্নভিন্ন-রক্তাক্ত হয় হন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। শুধু গ্রেনেড নিক্ষেপ নয়, চলতে থাকে গুলি।

বর্বরোচিত ওই হামলায় নিহত হন দলের সক্রিয় নেত্রী আইভি রহমান। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব:) মাহবুবুর রশীদ নিজের জীবন দিয়ে রক্ষা করেন শেখ হাসিনার প্রাণ। এছাড়া আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া।

ওই দিনের হামলায় মারাত্মক আহত হন শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, এডভোকেট সাহারা খাতুন, প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা পারভীন, এডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দিপ্তী, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিকসহ ৫ শতাধিক নেতা-কর্মী।

ঘটনার পর পরই আলামত নষ্ট করা থেকে শুরু করে তদন্ত ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। এসব বাধা-বিপত্তির পর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঘটনার পুনঃতদন্ত হয়। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি পৃথক মামলায় আদালতে দাখিলকৃত চার্জশিটে মোট ৫২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ওই হামলার উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা ও আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করা। হামলার আগে ঢাকায় ১০টি বৈঠক হয়। ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠকগুলো তারেক রহমান ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মুজাহিদ, আব্দুস সালাম পিন্টু, হারিস চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন৷টাকা এবং গ্রেনেড আসে পাকিস্তান থেকে। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিন-এর আব্দুল মাজেদ বাট এই কাজে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। বাংলাদেশে হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ-এর সদস্যরা।