২১ শে আগষ্টের শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানাল ছাত্রদল

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শালীহর গ্রামে ১৯৭১ সালের ২১ শে আগষ্ট পাকবাহিনীর গণহত্যায় ১৪ জন শহীদ হন। এছাড়াও শালীহর গ্রামের দুইজনকে ধরে নিয়ে যায় পাকবাহিনী। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও শহীদ পরিবারদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি। তাঁদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে গৌরীপুর উপজেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট শালীহর গ্রামে পাকবাহিনীর গণহত্যায় নবর আলী, মোহিনী মোহন কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস, কিরদা সুন্দরী, শচীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, তারিনীকান্ত বিশ্বাস, দেবেন্দ্র চন্দ্র নম দাস, খৈলাস চন্দ্র নম দাস, শত্রুগ্ন নম দাস, রামেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অবনী মোহন সরকার, কামিনী কান্ত বিশ্বাস, রায় চরণ বিশ্বাসসহ ১৪ জন শহীদ হন।
এছাড়াও ১৯৭১ সালের ১৬ মে মধু সূদন ধর ও ২১ আগস্ট ছাবেদ আলীকে শালীহর গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে যায় পাকবাহিনী। পরে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২০২১ সালে শালীহর বধ্যভূমিতে গণপূর্ত ও গৃহায়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে প্রায় ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিসৌধ। প্রতিবছর ২১ আগস্ট শালীহর গণহত্যা দিবসে এই স্মৃতিসৌধ স্থানীয় প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার সহ সর্বস্তরের মানুষজন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
কিন্তু অযত্ন- অবহেলায় শালীহর বধ্যভূমির অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে। সামীনা প্রাচীর না থাকায় বধ্যভূমিতে গরু-ছাগল চড়ানো হয়। স্মৃতিসৌধের ভেতর যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে স্মৃতিসৌধের চারপাশে আগাছার-জঞ্জাল হয়ে যায়।
এ দিকে বধ্যভূমির বেহালদশার বিষয়টি উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবিদ হাসান রাহাতের নজরে আসলে বুধবার তিনি ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বধ্যভূমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নেন। ‘শালীহর গণহত্যা দিবসের ৫৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ময়লা-আবর্জনা ও জঞ্জাল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে ধুয়ে-মুছে ও চারপাশে থাকা আগাছা পরিস্কার করে নতুন রূপ দিয়েছে তাঁরা।
পরে শালীহর গণহত্যায় ১৬ জন শহীদের নামে একটি করে বৃক্ষরোপণ করেন বধ্যভূমি প্রাঙ্গণে।
উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য তানভীর আহমেদ বলেন, ২১ শে আগষ্টের শহীদদের স্মৃতিতে গড়ে তোলা বধ্যভূমি ও নির্মাণকৃত স্মৃতিসৌধটি সুরক্ষিত করা প্রয়োজন। অযত্ন-অবহেলায় স্মৃতিসৌধটির অবস্থা বেহাল। শালীহর গণহত্যা ৫৪ বছর পূর্তিতে এখানে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
আমরা নিজেদের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বধ্যভূমির জঞ্জাল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে ধুয়ে মুছে সুন্দর রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছি। প্রশাসনের কাছে বধ্যভূমির চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে স্থানটির সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে স্থানটির সৌন্দর্যবর্ধনের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবিদ হাসান রাহাত বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও শালীহর গণহত্যায় শহীদদের পরিবার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি। অনেক শহীদ পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছি। সরকার যেন শহীদ পরিবাগুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি অসহায় শহীদ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা শহীদদের নামে ফলজ ও বনজ বৃক্ষরোপণ করেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজ আফিয়া আমিন পাপ্পা বলেন, শালীহর বধ্যভূমিটি সংস্কারের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে সমন্বয় করে বধ্যভূমি ও স্মৃতিসৌধের সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন