৫০ বছরেও ইসি নিয়ে আইন প্রনয়ন না হওয়া দু:খ জনক : নাজিমউদ্দিন আল আজাদ
বিএলডিপি চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী এম. নাজিমউদ্দিন আল আজাদ বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার জন্য সরকারের হাতে আর মাত্র চার মাস সময় আছে। বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অপর ৪ কমিশনারের পদের মেয়াদ ৫ বছর পর ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে যাচ্ছে। অথচ গত ৫০ বছরেও নির্বাচন কমিশন নিয়ে আইন প্রনয়ন না হওয়া দু:খ জনক। ৫০ বছর আগে সংবিধানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, তবুও সকল ক্ষমতাসীন সরকার এ বিষয়টি এড়িয়ে গেছে।
রবিবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে সচেতন জনতার মঞ্চ আয়োজিত “নির্বাচন কমিশন গঠনে করণীয়”-শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার ব্যর্থতার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছে। এ ধরনের নির্বাচনের কারণে অনেক মানুষ ও রাজনৈতিক দল ভোট প্রক্রিয়ার প্রতি উৎসাহ হারিয়েছে। ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে বেশিরভাগক্ষেত্রেই সরকার তাদের পছন্দের লোকদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে এসেছে।
সংগঠনের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ গণআজাদী লীগের মহাসচিব মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খানের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সদস্য সচিব বাংলাদেশ ফেডারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ড. এ আর খান, স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সমন্বযকারী ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগ সভাপতি ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ। বক্তব্য রাখেন গর্জো’র সভাপ্রধান সৈয়দ মঈনুজ্জামান লিটু, স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য প্রক্রিয়া সমন্বয়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া, সাবেক সচিব ও সোনার বাংলা আন্দোলন এর সংগঠক কাশেম মাসুদ, বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি এম এ জলিল, এনডিপি মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, সোনার বাংলা পার্টির সাধারন সম্পাদক সৈয়দ হারুন-অর-রশিদ, এফডিপির মহাসচিব শাহেদ আহমদ শ্রাবন, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পাড়টির চেয়ারম্যান অধ্যাপক বজলুর রহমান আমিনি, পিপলস পাওয়ার পার্টির মহাসচিব নুর মোহাম্মদ, কল্যাণ পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ওবায়দুল্লাহ মামুন, এনডিএম এর সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান হীরা, তৃনমুল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রোখসানা আমিন সুরমা, জাতীয় জাগো নারী ফাউন্ডেশনের সভাপতি রেহেনা আকতার রেনু, বাংলাদেশ ন্যাপ সমাজ কল্যাণ সম্পাদিকা মিতা রহমান, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাসেম মজুমদার, বাংলাদেশ নাগরিক আন্দোলন পার্টির চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াছিন আখতার, বাংলাদেশ কনজার্ভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান এম এম আনিছুর রহমান দেশ, বিএলডিপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ কবির হোসেন,প্রমূখ।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন প্রণয়ন যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি প্রয়োজন। যদি আইন প্রণীত হয়, তাহলে সরকার নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিতে পারবে না, কারণ সেক্ষেত্রে প্রার্থীদের যোগ্যতা কী হবে, তা এই আইনই নির্ধারণ করবে।
তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সাফল্যের সঙ্গে জনগণকে ভোটবিমুখ ও বিশাল সংখ্যক পদে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন করতে সক্ষম হয়েছে। এটি দেশের নির্বাচনকে একটি প্রহসনে পরিণত করেছে। নির্বাচন কমিশনের সম্ভাব্য সদস্যদের নাম প্রস্তাব করার জন্য গঠিত বর্তমান সার্চ কমিটির কোনো ‘আইনগত ভিত্তি’ নেই।
সভাপতির বক্তব্যে মুহম্মদ আতাউল্লা খান পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের উদাহরণ দিয়ে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে এ সংক্রান্ত আইন আছে এবং আমাদেরকে সব কিছু নতুন করে তৈরি করতে হবে না। তথাকথিত এড-হক সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগদানের প্রক্রিয়াটি একটি কলঙ্ক ছাড়া আর কিছুই নয়।
স্বাগত বক্তব্যে ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। কিন্তু তার আগে আমাদের একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন, যাদের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।
মূল প্রবন্ধে ড. এ আর খান নির্বাচন কমিশন নিয়ে ‘স্থায়ী সমাধান’ পাওয়ার জন্য সংবিধান অনুযায়ী একটি আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে বলেন, সংবিধানে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। এটি হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। তবে কোনো সরকার এ পর্যন্ত এটি করেনি।
বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য আইন প্রণয়নের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। ২০০৭-২০০৮ এ তৎকালীন নির্বাচন কমিশন একটি খসড়া আইন তৈরি করে সেটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে জমা দিয়েছিল। তৎকালীন সরকার নির্বাচন কমিশনকে জানায়, তারা যেনো খসড়াটি পরবর্তী সরকারের কাছে জমা দেয়। আরও যাচাইবাছাইয়ের পর ২০১১ সালে আরেকটি খসড়া তৈরি করা হয়।
আলোচকরা বলেন, আইন না থাকায় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যোগ্যতার সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি যেমন নেই, তেমনি কী কী বিষয়ের ভিত্তিতে একজন কমিশনারকে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে, সে ব্যাপারেও কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ফলশ্রুতিতে সমগ্র প্রক্রিয়াটি বিতর্কের জন্ম দেয়।
তারা বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন বিরোধী দল, নির্বাচন বিশ্লেষক ও সুশীল সমাজের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছে। এছাড়াও, সংস্থাটি স্থানীয় ও উপ-নির্বাচনে ভোটারের অনুপস্থিতি ও অনেক প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কারণেও সমালোচিত হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন