৬০ বছরের টগবগে তরুণ মীর বরকত

মীর বরকত ষাট বছরের প্রাজ্ঞ এক টগবগে তরুণে পরিণত হয়েছেন আজ। তিনি একাধারে একজন সফল আবৃত্তি ও নাট্যনির্দেশক, সুঅভিনেতা ও আবৃত্তিশিল্পী, একজন দক্ষ সংগঠক ও প্রশিক্ষক। সর্বোপরি একজন সার্বক্ষণিক সাংস্কৃতিক কর্মী। শনিবার সন্ধ্যা ৭ টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘শুভ ষষ্টি মীর বরকত’ শিরোনামে জন্মোৎসবের আয়োজন করে কণ্ঠশীলন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কণ্ঠশীলন অধ্যক্ষ মীর বরকতকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তথ্যচিত্রে সংস্কৃতিঅঙ্গনের বিশিষ্টজন মীর বরকতকে নিয়ে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন। এছাড়াও তিনি একক কণ্ঠে আবৃত্তিও পরিবেশন করেন। তার আবৃত্তি নিশ্চয়ই নতুন প্রজন্মের আবৃত্তিকর্মীদের পথচলার সঠিক নির্দেশনা দিতে সক্ষম হবে।

আবৃত্তি এবং নাট্যশিল্পীদের অতিপরিচিত ও প্রয়োজনীয় নাম মীর বরকত। শুদ্ধ উচ্চারণ, শুদ্ধ বচন বর্তমানকালে তরুণ প্রজন্মের অহংকার। মনের ভাব প্রকাশের পাশাপাশি নিজ ব্যক্তিত্ব তুলে ধরার অন্যতম মাধ্যম হলো ভাষা। ভাষার শুদ্ধতা-কুলীনতা, প্রয়োগ ও উপস্থাপনা শুধু ভাষার শ্রেষ্ঠত্বকেই তুলে ধরে না ব্যক্তি মানুষকে অপরূপ সুন্দর এবং মর্যাদাবান করে তোলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করার পর মীর বরকত যদিও ব্যাংকের চাকরিতে যোগদান করেছিলেন, কিন্তু সেটাই তার প্রধান কর্মের স্থান হলেও প্রধান পরিচয়টা গড়ে ওঠেনি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে। তিনি দিনে দিনে, কালে কালে হয়ে উঠেছেন একজন ভাষাবিদ, উচ্চারণবিদ, আবৃত্তিশিল্পী, প্রশিক্ষক, শিক্ষক, নাট্যনির্দেশক সর্বোপরি একজন সংস্কৃতিমান ব্যক্তি হিসেবে।

নিজস্ব সংগঠন কণ্ঠশীলন ছাড়াও দেশব্যাপী শতাধিক আবৃত্তি ও নাট্যসংগঠনে প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত মীর বরকত। সংস্কৃতি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শৈল্পিক কর্মশালার প্রশিক্ষক হিসেবে নিজের মর্যাদা ও অবস্থানকে অপরিহার্য করে তুলেছেন। নিজ দল এবং অন্যান্য সংগঠন মিলিয়ে প্রায় ৫০টি আবৃত্তি প্রযোজনা এবং ৩টি মঞ্চনাটকের নির্দেশনা দিয়ে সুধী এবং বিজ্ঞমহলে প্রশংসিত হয়েছেন। অনেক দুঃখের মধ্যেও তিনি রস করতে পারেন, হাসাতে পারেন। এই কাজটা ক’জনা পারে।

তিনি যেমন অন্যের নির্দেশিত নাটকে ও আবৃত্তি প্রযোজনায় অংশগ্রহণ করেছেন তেমনি তাঁর নির্দেশিত নাটক ও আবৃত্তি প্রযোজনায় যুক্ত করেছেন সকলকে। আবৃত্তি ও নাট্যাঙ্গনে দীর্ঘ চার দশকের পথচলায় অসংখ্য আবৃত্তি ও নাট্যশিল্পীর গুরু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মীর বরকত। কিন্তু কখনো গুরুগিরি ফলানোর প্রবণতা দেখা যায়নি তার মধ্যে।

শনিবার প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আবৃত্তি করেন মীর বরকত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গান সমাপন’, ‘বিম্ববতী, ‘দুই পাখি’, ‘তোতাপাখি’, জীবনানন্দ দাশের ‘সহজ’, ফজল শাহাবুদ্দিনের ‘বাংলা ভাষা, মা আমার’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘বায়োস্কোপ’, অসীম সাহার ‘আমাদের রাজকুমার ও বাংলাদেশ’, ইকবাল খোন্দকারের ‘কৌতুক ছড়া’, নির্মলেন্দু গুণের ‘গামছা’, মুহম্মদ নূরুল হুদার ‘বস্ত্র নিয়ে’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘কুহেলিকা’, লোককবি আবদুল হাই মাশরেকীর ‘কিছু রেখে যেতে চাই’ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জন্মদিন’ কবিতাগুলো।