৭ দিন ধরে পদ্মা পাড়ির অপেক্ষায়
নাব্যতা ও ফেরি সংকটে গত এক সপ্তাহে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা কাটেনি। লৌহজং চ্যানেলে নাব্যতা সংকটে রো রো (বড়) ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে পড়েছে বাড়তি চাপ। সেইসঙ্গে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে আটকা পড়েছে শতাধিক যানবাহন।
এদিকে, টানা সাতদিন পদ্মা পার হওয়ার অপেক্ষায় ঘাটে আটকে থেকে বিপাকে পড়েছে পণ্যবাহী পরিবহনের চালক ও তার সহকারীরা। খাদ্য, পয়ঃনিষ্কাশনসহ নানা সমস্যার মুখে পড়ছে আটকে থাকা পাঁচ শতাধিক পরিবহন শ্রমিক।
রোববার বিকেলে ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায় এই চিত্র। বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাঁঠালবাড়ি ঘাটে ৩ কিলোমিটারজুড়ে ৫ শতাধিক পণ্যবাহী যানবাহন সিরিয়ালে আটকা পড়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, কাঁঠালবাড়ি লৌহজং চ্যানেলে নাব্যতা সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ছয়দিন ধরে রো রো ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে উজানে নদীভাঙন ও উজান থেকে পলি মিশ্রিত পানি আসার কারণে বিকল্প চ্যানেলে এবং চ্যানেল মুখে দ্রুত পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট সূত্র জানায়, শিমুলিয়া নৌরুটে ১৭টি ফেরি, ৮৭টি লঞ্চ এবং দুই শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করে। নাব্যতা সংকটের কারণে ছয়টি ডাম্প ফেরি ও তিনটি রো রো ফেরি চলাচল করতে পারছে না। এখন দুটি ভিআইপি ফেরিসহ ৫-৬টি ফেরি কোনোমতে চলাচল করছে। বিকল্প চ্যানেলের ৮ কিলোমিটার নৌপথে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে।
এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা বলছেন, নৌপথে ফেরি চলাচলে এই অবস্থা থাকলে পবিত্র ঈদুল আজহায় নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবেন না তারা। গত কয়েকদিন ধরে ফেরি চলাচলে অচলাবস্থার কারণে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে এখন প্রায় পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। এবারও যদি ঈদের সময় ট্রাক পারাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় আগামী ১৫ দিনেও নদী পার হতে পারবেন না বলে ধারণা করছেন ট্রাকচালকরা।
ঘাটে আটকা পড়া ট্রাকচালক জসিম, আমিরুল, জাহিদ ও বেল্লাল হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা ঘাটে এসে পদ্মা পাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। নদী পার হতে পারছি না। কবে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে তা কেউ বলতে পারছে না। শুনেছি রো রো ফেরি চলাচল বন্ধ রেখে লৌহজং চ্যানেলের মুখে ও বিকল্প চ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে। কিন্তু সেই কাজ কবে শেষ হবে আর আমরা কবে নদী পাড়ি দেব জানি না।
কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ইজারাদার ইয়াকুব বেপারী বলেন, গত এক মাস ধরে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে নাব্যতা সংকট দূর করতে কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না। ঈদুল আজহায় কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে ঘাট দিয়ে যাত্রীরা পারাপার হতে পারবে কিনা বলা যায় না। কবে নাগাদ সমাধান হবে জানি না।
বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ি ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন বলেন, নাব্যতা সংকটের কারণে শুধু রো রো ও ডাম্প ফেরি চ্যানেল অতিক্রম করতে পারছে না। রো রো ফেরি চলাচলে কমপক্ষে আট ফুট পরিমাণ পানির দরকার, যা চ্যানেল মুখে নেই। তিনটি রো রো ও ডাম্প ফেরি বন্ধ রয়েছে। শুধু কেটাইপ সাতটি ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
তিনি বলেন, যাতে নৌযান চলাচলে কোনোরকম সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্য সাতটি ড্রেজার দিয়ে বিকল্প চ্যানেলে ড্রেজিং করা হচ্ছে। নাব্যতা সংকট থাকলেও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চ্যানেল দিয়ে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক করা হবে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ বলেন, ঈদুল আজহা এবার বর্ষা মৌসুমে থাকায় এবং নাব্যতা সংকটে নৌযান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। রো রো ফেরিগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে যাতে নৌযান চলাচলে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্য ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চ্যানেলটি সচল রাখা হচ্ছে। বিকল্প চ্যানেলে ড্রেজিংয়ের কাজ শেষে রো রো ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন