৭ বছর বয়সী মানুষের সমান বুদ্ধি রাখে কাক! (ভিডিও)

পাখিকে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসাবে গণ্য করা হয় না। কিন্তু ঈশপের গল্পের বাস্তবিক প্রমাণ মিলল একটি পরীক্ষায়। নতুন এক গবেষণায় আমেরিকান গ্রেট-টেইলড গ্রেকল প্রমাণ করল, সে সমস্যার বেশ সমাধান করতে পারে বুদ্ধি খাটিয়ে। আমাদের অতি পরিচিত কাকও সমান বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী। বৈজ্ঞানীক পরীক্ষায় প্রমাণ মিলেছে, কাক বা গ্রেকল আসলে ৭ বছর বয়সী মানুষের সমান বুদ্ধিসম্পন্ন পাখি।

এক পরীক্ষায় কাককে একটি সমস্যাসংকুল পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয়। সমাধান করতে পারলে মিলবে খাবার। সে বিজ্ঞানীদের অবাক করে দিয়েছে। বুদ্ধি খাটিয়ে নানা কৌশলে পাজল মেলাতে সক্ষম হয় পাখিটি। এমনকি পাজল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট্রাল আমেরিকান পাখিটি তার কৌশলও বদলে ফেলে খাবারটি হাসিল করতে।

এ ধরনের দক্ষতাকে বলা হয় ‘বিহেভিয়োরাল ফ্লেক্সিবিলিটি’। এ নিয়ে মানুষের ওপরই পরীক্ষা চলে। পশু-পাখির বিহেভিয়োরাল ফ্লেক্সিবিলিটি নিয়ে তেমন পরীক্ষা হয়নি। ‘পিরজে’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দেখানো হয়, কাক কিংবা গ্রেকল কীভাবে তার কাজ সম্পন্ন করতে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেয় বুদ্ধি খাটিয়ে?

ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের গবেষক করিনা লোগান জানান, যখন আপনার হাতে একটি হাতুড়ি রয়েছে তখন সব সমস্যাকে লোহার কাঁটা বলে মনে হবে। সমস্যা সমাধানে সঠিক উপকরণের ব্যবহারই বিহেভিয়োরাল ফ্লেক্সিবিলিটি।

এর আগেই লোগান কোস্টারিকায় গ্রেকলের আসাবস্থলে গিয়ে তাদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়েছেন। আপনি এদের কাছে গেলে তারা নিরাপদ দূরত্বে এগিয়ে আসবে, আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে, খাবার ছুড়ে দিলে তা খাবে। ওদের আচরণ সত্যিই মুগ্ধ করে বলে জানান লোগান।

২০০ বছর ধরে গ্রেকল সেন্ট্রাল আমেরিকায় তাদের সংখ্যা ৫০০০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এদের রাজত্ব গড়ে তুলেছে কেবল বুদ্ধির জোরে।

বুদ্ধির দৌড় পরীক্ষা করতেই ৮টি গ্রেকল সংগ্রহ করেন লোগান। বুদ্ধির ক্ষিপ্রতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা দেখতে তাদের দুটো পাজলে ছেড়ে দেওয়া হয়।

একটি পাজল বানানো হয় ঈশপের গল্পে উদ্ভুদ্ধ হয়ে। খাবার পানিতে ভাসছিল যা তাদের নাগালের বাইরে। ওটা পেতে হলে গল্পের সেই কাকের মতো পানিকে ওপরের দিকে আনতে হবে।

অন্য পরীক্ষায় ভিন্ন রংয়ের দুটো গর্ত করা হয়। এদের মধ্য দিয়ে গিয়ে খাবারের নাগাল পাওয়া যাবে। এ পরীক্ষা সাধারণত বিহেভিয়োরাল ফ্লেক্সিবিলিটি পরখ করা হয়।

দুটো পরীক্ষাতেই পাস করে গেছে পাখিগুলো। তারা ঠিকই তাদের খাবার নাগালে এনেছে। ঈশপের গল্পের নকশায় লোগান বড় আকারের নুড়ি বা পাথরগুলো কৃত্রিমভাবে তৈরি করেন। অর্থাৎ এগুলো ব্যবহার করে কোনো লাভ হবে না। কাজেই ছোটগুলো ব্যবহার করতে হবে। আবার দ্বিতীয় পরীক্ষায় গর্তের রংয়ের সঙ্গে খাবার মেলার বিষয়টি জড়িত ছিল।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষক জন মার্জলাফ বলেন, লোগান পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছেন যে, প্রাণীভেদে অনিশ্চিত পরিবেশ থেকে শেখার বিষয়টি ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে পরীক্ষাটি দারুণ। এমন বুদ্ধির প্রয়োগ মানুষের মাঝেই দেখা যায়।