৯৯৯ নম্বরের ফোনে পুলিশ এসে সতর্ক করলেও বন্ধ হয়নি ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’অফিসের অবৈধ কর্মকাণ্ড

২০১৮ সালে বনানীর জি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ৪২ নম্বর বাসার পঞ্চম তলায় একটি ফ্ল্যাটে ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’ নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খোলেন নজরুল ইসলাম রাজ। মাসিক ৫৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অফিসটি উদ্বোধন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ অনেক রাজনৈতিক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

আর সেই ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’র অফিসেই ছিল যত অনৈতিক কাজের আখড়া। দিনভর ‘সুন্দরীদের’ আনাগোনা ছিল সেখানে।

৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’অফিসের অবৈধ কর্মকাণ্ড বিষয়ে জানিয়েও লাভ হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪২ নম্বর বাড়িতে বসবাসকারী একজন এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন গণমাধ্যমকে।

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ৫ম তলায় নারী-পুরুষ প্রবেশ করতেন। অনেক সময় গভীর রাতেও তারা আসতেন। তারা দীর্ঘ সময় এ ফ্ল্যাটে অবস্থান করতেন। ভেতর থেকে অনেক সময় নারীদের চিৎকার শোনা যেত। তবে ভেতরে কী হচ্ছে তা জানা যেত না। জানতে চাইলেও কিছু বলা হতো না। উল্টো ভয়ভীতি দেখানো হতো। এ কারণে পার্শ্ববর্তী ফ্ল্যাটের মালিকরা মিলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশ ডেকে তাদের সতর্ক করা হলেও সেসব বন্ধ হয়নি।’

ওই বাড়ির ম্যানেজার আলি মিয়া বলেন, ‘রাজ সাহেব গাড়ি নিয়ে প্রতিদিন সকাল-বিকেল আসতেন। অনেক সময় বাইরের অনেক নারী-পুরুষ নিয়ে ফ্ল্যাটে রাত কাটিয়ে সকালে বের হয়ে যেতেন। বাড়ির মধ্যেও অনেক সময় নাটকের শুটিং করত বলে অন্য ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া ও ফ্ল্যাটের মালিকরা রাজকে ডেকে সতর্ক করেন। তবে তিনি কারো কথা শুনেননি।’

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে র‍্যাব সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রাজ ও তার ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’ প্রতিষ্ঠান বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেছেন, গ্রেফতার রাজ ১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদ্রাসায় দাখিল সম্পন্ন করেছেন। ঢাকায় এসে ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করেন। রাজ প্রথমে নামে-বেনামে বিভিন্ন নাটক, সিনেমায় প্রযোজনা করতেন। এটি ২০১৪ সালের ঘটনা। ২০১৮ সালে রাজ তার রাজ মাল্টিমিডিয়া প্রতিষ্ঠা করে। তার এই প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানো হয়েছে। অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে পর্নোগ্রাফির কনটেন্ট জব্দ করেছে র‌্যাব।

রাজের উত্থানের পেছনের ইতিহাস জানাতে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, রাজ গ্রেফতার শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের সহযোগিতায় ১০-১২জন তরুণী নিয়ে একটি অপরাধচক্র তৈরি করে। এই চক্রটি গুলশান, বনানী, বারিধারাসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ডিজে পার্টির আয়োজন করত। এসব পার্টিতে মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম সংঘটিত হতো। এসব পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের থেকে বিভিন্নভাবে মোটা অংকের অর্থ সংগ্রহ করা হতো। এরইমাধ্যমে রাজসহ এই চক্রের সদস্যরা রাতারাতি বিপুল পরিমান অর্থের মালিক বনে যান।

‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’অফিসে এসব তরুণীর যাতায়াত ছিল। সেখান থেকেই সব অনৈতিক কাজের পরিচালনা করতেন রাজ।

র‌্যাব আরো জানায়, পরীমনিকে চিত্রজগতে নিয়ে আসেন এই নজরুল ইসলাম রাজ। সিনেমায় নাম লেখানোর আগে দীর্ঘদিন রাজের কাছেই থাকতেন পরীমনি। পরীমনির বাড়িতে মাদক সরবরাহ করতেন এই রাজই।

বৃহস্পতিবার বনানীর বাসা থেকে মাদকসহ আটক পরীমনি ও প্রযোজক রাজসহ চার জনকে গ্রেফতার দেখায় র‍্যাব।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার বিকেল ৪টার দিকে পরীমনির বাসায় অভিযান যায় র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। এ সময় তাৎক্ষণিক ফেসবুক লাইভে এসে পরীমনি বিষয়টি সবাইকে জানান।

পরে পরীমনিকে বিপুল পরিমান মাদকসহ আটক করে বুধবার রাতে র‍্যাব সদরদফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতভর সেখানেই রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পরীমনিকে। বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পরীমনির দেওয়া তথ্যমতেই একই রাতে রাজকে আটক করে র‌্যাব।