জাতিসংঘ, ইইউ, কমনওয়েলথকে চিঠি দিল বিএনপি

বাংলাদেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন, রাজনীতি ও মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিএনপি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কমনওয়েলথকে চিঠি দিয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা মামলায়’ সাজা দিয়ে তাঁকে ছাড়াই আগামী সংসদ নির্বাচনে সরকারের দুরভিসন্ধির কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছে বিএনপি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঢাকার কার্যালয়ে বার্তা বাহকের মাধ্যমে এই চিঠি দেওয়া হয়। আর কমনওয়েলথ মহাসচিবের কাছে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে ই-মেইলে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অভিন্ন ভাষায় লেখা ওই চিঠিতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিরোধী দলের ওপর সরকারের দমন-পীড়ন, খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা, মামলায় সরকারের হস্তক্ষেপ, ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায়ের আগে-পরে সারা দেশে পাঁচ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ঢাকায় জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতার কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

বিএনপির কূটনীতিক বিভাগের একজন সদস্য বলেন, ‘বিদেশি সংস্থা ও রাষ্ট্রগুলো একটি দেশের নির্বাচন সামনে রেখে “নির্বাচনের পূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী” সময়কে ভাগ করে পর্যবেক্ষণ করে। তাই পুরো পরিস্থিতি তুলে ধরে আমরা বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের সহায়তা চেয়েছি।’ জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথ মহাসচিবকে চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জাতিসংঘে আমাদের যে অঙ্গীকারগুলো আছে যেমন: গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ভোটাধিকার, মানবাধিকার এখানে চরমভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। কমনওয়েলথের মূল্যবোধেরও পরিপন্থী কাজ হচ্ছে। চিঠিতে এ বিষয়গুলো রয়েছে।’

ইসিতে বিএনপির চিঠি
তফসিল ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ইসিতে চিঠি দিয়ে এ আহ্বান জানান।

জানা গেছে, চিঠির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাসংক্রান্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাত দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফর, ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল সফর এবং রাজশাহী সফরে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়া, সমাবেশ করা ও ভোট চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন চিঠিটি আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে পৌঁছে দেন। এ ছাড়া আলাদা একটি চিঠিতে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটিসহ কমিশনের চাওয়া দলীয় কিছু তথ্যও দেওয়া হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় টাকা খরচ করে প্রচার-প্রচারণা করছেন। তফসিল ঘোষণার আগে এ ধরনের নির্বাচনী প্রচার আচরণবিধি ও আইনের লঙ্ঘন। সরকারপ্রধানের এ ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির পরিপন্থী। পাশাপাশি তা আইনেরও লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গতকাল নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে মিথ্যা মামলায়। আর প্রধানমন্ত্রী দেশ-বিদেশে সরকারি খরচে নৌকার প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাই আমরা কমিশনের কাছে যৌক্তিক দাবি জানিয়েছি অবিলম্বে এ ধরনের প্রচারণা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে। আমরা আশা করছি নির্বাচন কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। আর যদি তারা যদি সেটা না করে তাহলে আমরা আগে যে অভিযোগ করেছি, নির্বাচন কমিশন সরকারের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে সেটা আবারও প্রমাণ হবে।’