অন্ধ পিয়নের ১১ বছরের বেতন তুলে খেলেন প্রধান শিক্ষক
২০০৫ সালে আকস্মিক চোখের আলো হারিয়ে যায় বগেরগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন ফজলুর রহমানের। এরপর প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম তাকে আর স্কুলে আসতে দেননি। কিন্তু তার নামে ঠিকই টাকা বরাদ্দ হয়। আর দৃষ্টিশক্তি হারানো ফজলুরের সই নকল করে সেই টাকা এগারো বছর ধরে তুলে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
সম্পতি ঘটনাটি জানাজানি হলে প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার তদন্ত দলও গঠন করে দিয়েছেন। আর প্রাথমিকভাবে অভিযোগের প্রমাণও মিলেছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।
পিয়ন ফজলুর রহমান জানান, ১৯৯০ সালের ২ জানুয়ারি তিনি উপজেলার বগেরগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পিয়ন পদে চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালের ১ জানুয়ারি তার চাকরি এমপিওভুক্ত হয়। ২০০৫ সালে চোখের সমস্যা দেখা দেয়। এতে তার দুটি চোখই অন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে প্রধান শিক্ষক তাকে বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করেন এবং তার বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে বলে পিয়ন ফজলুর রহমানকে জানিয়ে দেন।
এরপর প্রধান শিক্ষক পিয়ন ফজলুর চিকিৎসা ব্যয় দেওয়ার কথা বলে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন এবং কাগজটিতে পদত্যাগপত্র লিখে প্রধান শিক্ষক গোপন করে রাখেন।
ফজলুর রহমানের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক রেজাউল তার কল্যাণ ও অবসর তহবিলের টাকা তুলে চোখের চিকিৎসা করানোর কথা বলে কোটচাঁদপুর রূপালী ব্যাংকের চেকের আটটি পাতায় স্বাক্ষর করিয়ে নেন।
ওই চেকবই এর পাতা শেষ হলে প্রধান শিক্ষক নিজেই ভুয়া সই দিয়ে ব্যাংক থেকে আরো নতুন বই তুলে ফজলুরের বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আসছিলেন। এভাবে ২০০৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফজলুর রহমানের বেতন-ভাতা তুলেছেন ওই প্রধান শিক্ষক।
ফজলুর ঘটনা জানতে পেরে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কাছে একটি অভিযোগ করেন। জেলা প্রশাসক তার অভিযোগটি তদন্তের জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমারকে দায়িত্ব দেন। আর উত্তম কুমার গত ৪ মার্চ কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল আলিমকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন।
ফজলুর রহমানের ছেলে শাহাজান আলী বলেন, ‘আমার বাবার স্বাক্ষর জাল করে অসৎ প্রধান শিক্ষক প্রায় ১১ বছরে ১১ লাখ টাকা তুলে আত্মসাত করেছেন। অথচ সবাই অন্ধ ছিলেন। আমি এর বিচার চাই।’
তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলিম জানান, ‘প্রাথমিক তদন্তে বেতনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এখনও তদন্ত চলছে। আমি দুই পক্ষকে কাগজপত্র জমা দিতে বলেছি।’
পিয়নের বেতন তুলে খাওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং ব্যস্ততার অজুহাতে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন