‘ইউএনও সাহেব বঙ্গবন্ধুকে দেখেন নাই, সেকারণেই বিকৃত ছবি ছেপেছেন’
“বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারেক সালমানের মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম হয় নাই। তিনি বঙ্গবন্ধুকে দেখেন নাই। সেকারণেই বঙ্গবন্ধুর ‘বিকৃত’ ছবি দিয়ে কার্ড ছাপতে পেরেছেন। উনি যদি বঙ্গবন্ধুকে দেখতেন, তখন যদি তার জন্ম হতো, তাহলে বুঝতেন বঙ্গবন্ধু কী জিনিস!” পঞ্চম শ্রেণির এক শিশু শিক্ষার্থীর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে কার্ড ছাপানোয় ইউএনও’র বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ ও মানহানির মামলা দায়েরকারী বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওবায়েদ উল্লাহ সাজু দেওয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
তবে ওবায়েদ উল্লাহ সাজু দাবি করেন, তিনি জানতেন না ওই ছবিটি কোনও শিশুর আঁকা। পরে দেখেছেন কার্ডের এক পাশে ‘ছোট্ট’ করে লেখা আছে ওই শিশুর পরিচয়। তার ভাষ্য, “শুধু ‘বিকৃত’ ছবিই বিষয় নয়। বঙ্গবন্ধুর ছবি কার্ডের দ্বিতীয় পাতায় ছাপা হয়েছে। এটাও বঙ্গবন্ধুর অবমাননা।” তার দাবি, ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি কেন প্রথম পাতায় ছাঁপা হলো না?’
মামলা দায়েরকারী আইনজীবী আরও বলেন, ‘এই ছবির কথা কয়েকটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তখন আমার চোখে পড়েছে। আমার মনে হয়েছে তিনি বঙ্গবন্ধুকে অপমান করার জন্যই এই ছবি ছেপেছেন। আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবাসি বলেই কষ্ট পেয়ে মামলা করেছি। কেউ আমাকে মামলা করতে প্ররোচিত করেনি।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গববন্ধুর যে ছবি ছাপা হয়েছে সেখানে অনেক অসঙ্গতি আছে। বঙ্গবন্ধুর ব্যাকব্রাশ, ফিগার এবং আরও কিছু বিষয় সঠিকভাবে আঁকা হয়নি। গলায় একটা মাফলার দেওয়া হয়েছে, যা ঠিক হয়নি।’
প্রশ্ন করা হয়: এটাতো একটি শিশুর আঁকা ছবি। তার কি কোনও উদ্দেশ্য থাকতে পারে?
-শিশুর আঁকা ছবি ঠিক আছে। তাহলে একই কার্ডে আরও একটি শিশুর ভিন্ন বিষয়ে ছবি আছে। সেটাতো সুন্দর। তবে আমি বুঝতে পারিনি যে কার্ডে ছাপা বঙ্গবন্ধুর ছবিটি কোনও শিশুর আঁকা। আমি প্রথম পত্রিকায় ছবিটি দেখি। পরে কার্ডটি জোগাড় করে মামলাটি করি। কার্ডে এক পাশে ছোট করে লেখা ছিল শিশুর নাম ও পরিচিতি যা সাধারণ চোখে দেখা যায় না। আমি যদি প্রথম জানতে পারতাম ছবিটি শিশুর আঁকা তাহলে মামলা করতাম না।
এখন তো জানতে পেরেছেন। মামলাটি কি এখন চালাবেন?
-আমারা তো মামলা করেছি। কোর্ট ওনাকে সমন দিয়েছে। উনি হাজির হয়েছেন। কোর্ট কী বুঝে জামিন ক্যানসেল করলো আবার কী বুঝে জামিন দিলো সেটা তাদের ব্যাপার। বিষয়টি এখন কোর্টের এখতিয়ার।
শিশুরাতো এখন ভয় পাবে। বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকবে না। শিশুর কল্পনা কি অপরাধ?
-না শিশুর কল্পনা অপরাধ হবে কেন? এখন তারা ছবি আঁকতে ভয় পাবে কেন? এখন গল্প বানানো হয়েছে। এটাতো তিন মাস আগের ঘটনা। উনি যদি প্রথম থেকে বলতেন এটা শিশুর আঁকা ছবি তাহলে এসব কিছু হতো না।
আপনি তো কার্ড দিয়ে মামলা করেছেন, কার্ডে কোখায় কী লেখা আছে দেখেননি?
-মামলার সময় দেখেছি। তবে অনেক ছোট করে পাশে লেখা এই ছবিটি পঞ্চম শ্রেণি পাশ অমুকের আঁকা। খুব ক্ষুদ্র আকারে লেখা সাধারণ চোখে যা পড়ে না। আর তিনি পরে আদালতে যে কার্ড দেখিয়েছেন তাতে বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রথম পাতায় ছিল। ছবিটিও ভাল করে আঁকা। এটা কিভাবে হলো আমি বুঝতে পারছি না। মামলার আগেও তিনি পত্রিকায় খবর ছাপা হওয়ার পরও বলেননি যে এটা শিশুর আঁকা।
একটি প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক পক্ষের হয়ে ইউএনওকে হেনস্তা করাতে মামলা করেছেন- এমন অভিযোগের জবাবে আইনজীবী ওবায়েদ উল্লাহ সাজু দাবি করেন,‘ আমি বঙ্গবন্ধুর অনুসারি, তাকে ভালোবাসি। কারুর প্ররোচনায় নয়। নিজে কষ্ট পেয়ে মামলা করেছি।’
এখনও কি ইউএনও’র শাস্তি চান?
-শাস্তি মূল বিষয় নয়। আমি এই মামলার মাধ্যমে সবাইকে একটি মেসেজ দিতে চেয়েছি। আর তা হল বঙ্গবন্ধুকে কোনোভাবে অসম্মান সহ্য করা হবে না।
মামলায় তো পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপুরণ দাবি করেছেন। যদি পান তাহলে ওই টাকা দিয়ে কী করবেন?
-কী করবো? মামলায় ক্ষতিপূরণ চাইতে হয়। তাই চেয়েছি। পেলে সরকারি কোষাগারে জমা দেবো।
প্রসঙ্গত, আগৈলঝরা উপজেলার ইউএনও থাককালে গাজী তারেক সালমান স্বাধীনতা দিবসে শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে কার্ড ছাপান। বরগুনা সদর উপজেলায় বদলি হয়ে যাওয়ার পর ৭ জুন তার বিরুদ্ধে বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ ও মানহানির মামলা করেন বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। ওই মামলায় ১৯ জুলাই প্রথমে তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও পরে একই দিনে তাকে জামিন দেওয়া হয়। (বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে প্রকাশিত)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন