ঋণ কেলেঙ্কারির দায় ম্যানেজারদের দিলেন মহীউদ্দীন
বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফারমার্স ব্যাংকে কোনো ধরনের অনিয়মের দায় অস্বীকার করেছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর। বলেছেন, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হলে সেটার দায় শাখা ব্যবস্থাপকদের।
গত কয়েক মাস ধরেই ব্যাংকটির দুরাবস্থাতে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে সাবেক এই স্বাষ্ট্রমন্ত্রীর। আজ সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তব্যে এসব সমালোচনার জবাব দেন তিনি।
মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, ‘ফারমার্স ব্যাংকে আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে আমরা কোন ঋণ অনুমোদনবিহীন ভাবে প্রক্রিয়াজাত করিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একজন পর্যবেক্ষক এটা অবলোকন করেছেন। এ ধরণের অনুমানভিত্তিক প্রচারণা আর্থিক ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা রাখার প্রতিকূল।’
‘ফারমার্স ব্যাংক কতিপয় ক্ষেত্রে যা অনুমোদিত হয়েছে, তার চাইতে বেশি ঋণ অননোমোদিতভাবে দেয়া হয়ে বলে তিনটি পত্রিকায় যে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে, সে অভিযোগ আমি অস্বীকার করছি।’
২০১৩ সালে বেশ কয়েকটি ব্যাংককে লাইসেন্স দেয়, যার একটি ছিল আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য মহীউদ্দিন খান আলমগীরের ফারমার্স ব্যাংক।
গত চার বছরে ব্যাংকটি নানা অনিয়মের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে যায়। আর ব্যাংকটিতে পরামর্শক বসায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
আর ঋণ কেলেঙ্কারি ও অব্যবস্থাপনায় চাপের মুখে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে মহীউদ্দীন খান আলমগীর গত ২৮ নভেম্বর পদত্যাগ করেন। একই দিন ব্যাংকটির অডিট কমিটির চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন মাহবুবুল হক চিশতী। তিন সপ্তাহের মাথায় অপসারণ করা হয় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীমকেও।
গত ২১ ডিসেম্বর সিলেটে স্বয়ং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংকটির দুর্দশার জন্য এর প্রতিষ্ঠাতাদের দায়ী করেন। সেদিন তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠাতাই ব্যাংকটিকে লুটপাট করে শেষ করে দিয়েছে।’
আবার গত ২৩ জানুয়ারি সংসদে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানান. ফারমার্স ব্যাংকে জলবায়ু তহবিলের ৫০৮ কোটি টাকা রাখা হয়েছিল। কিন্তু তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকটি এখন সে টাকা ফেরত দিতে পারছে না।
বেপরোয়া ও বেআইনি ঋণ দিয়ে ফারমার্স ব্যাংকের এই অবস্থা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
তবে এসব ঋণ প্রদানে কোনো ধরনের হাত নেই বলে দাবি করেছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। বলেন, ‘অনুমোদিত ঋণের বিরপরীতে টাকা দেওয়া বা সঞ্চালন করার এখতিয়ার ব্যাংকের ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের। তারা এক্ষেত্রে অনুমোদনের বাইরে যদি কোনো ঋণ দিয়ে থাকেন এটা তাদের দায়িত্ব। আমি যতিদিন চেয়ারম্যান ছিলাম আমরা জানামতে এ ধরনের ঘটনা গতদিন ঘটেনি।’
ব্যাংকে নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। বলেন, ‘আরেকটি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, যেসকল কর্মচারী বা ব্যক্তি নিয়োগ করেছি তা বিধিমোতবেক হয়নি। আমি এই নিশ্চয়তা দিতে চাই আমরা সকল ক্ষেত্রে যথাযোগ্য অফিসার এবং কর্মকর্তা নিয়োগ করার চেষ্টা করেছি এবং তাই হয়েছে।’
‘যতগুলো বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে তার মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের নিয়োগ দিয়েছে। এটা আমরা ইচ্ছকৃতভাবে দিয়েছি। যদি কেউ মনে করেন এটা ব্যাংকের স্বার্থ লঙ্ঘিত করেছে, তাহলে আমি বলব তারা সৎ কথা বলেননি।’
ফারমার্স ব্যাংক নিয়ে অভিযোগের জবাব দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা নিজের ব্যাংক হিসাবের ‘পুরো অংশ’ সংসদে নিয়ে আসেন মহীউদ্দীন খান। তিনি বলেন, ‘এই অংশে কোথাও কেউ প্রমাণ করতে পারবেন না যে কোনো ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে আমার এখানে কোনো অর্থ ঢুকেছে।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন, পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী আমি ১৭ জুলাই ১৩ কেটি টাকা গ্রাহকের হিসাব থেকে আমার হিসাবে নিয়ে এসেছি। আমি এ হিসাবটি উপস্থাপন করতে চাই। এখানে ১৭ জুলাই থেকে পরবর্তী ৭ বা ১০ দিনের হিসাব আছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংককে দোষারোপ
অনুমানের ভিত্তিয়ে তিনটি সংবাদপত্র তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে অভিযোগ করে মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, তারা (সাংবাদিকরা) তথ্য পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে স্পিকারের কাছে অনুযোগও জানান তিনি।
‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ সাল প্রণয়ণে আমার কিঞ্চিত ভূমিকা ছিল। সেই ভূমিকার আলোকে এই অর্ডারটি বা আইনটি আপনার (স্পিকার) সামনে উপস্থাপন করে আপনাকে অনুরোধ করব এ আইনের ৭৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে একটু অনুশাসন দেবেন। যে অনুশাসনের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার মেনে চলবেন।’
‘আমরা না থাকলে বেগম জিয়ার কারাদণ্ড হতো না’
১৯৯৬ সালে বিএনপিবিরোধী আন্দোলনের সময় গড়ে তোলা জনতার মঞ্চে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। আর তখন বিএনপির পতন হয়েছে বলেই এখন বেগম জিয়ার কারাদণ্ড হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
‘বেগম জিয়ার কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা হওয়ার পর আমাকে কতিপয় ব্যক্তি জানিয়েছেন যে, এই ধরণের কারাদণ্ড হতে পারতো না বা দিতে পারত না, যদি না ১৯৯৬ সালে সুশীল সেবকদের নিয়ে আমরা গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সংবিধান অনুযায়ী কাজ করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতাম এবং যথাযথ পদক্ষেপ না নিতাম।’
‘তারা বলেছেন, আমাদের ভাষায় যদি সেই অবৈধ সরকার অপসারিত না হতো তাহলে তারা পরবর্তী ২১ বা ২২ বছর ক্ষমতায় থাকত এবং তাদের ভাষায় বেগম জিয়াকে এর সম্মুখীন হতে হতো না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন