পরীক্ষার্থীদের গালে ইউএনও’র চড়, আতঙ্কে ৫ ছাত্রী অজ্ঞান

রাঙামাটির লংগদুতে শনিবার এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে পরীক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসাদ্দেক মেহ্দী ইমামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আতঙ্কে পাঁচ ছাত্রী জ্ঞান হারালে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুস্থ হওয়ার পর তারা বাসায় ফিরেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) গণিত পরীক্ষা চলাকালে সকাল ১১টার দিকে লংগদু বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যান ইউএনও। এ সময় কেন্দ্রের ৬নং কক্ষে প্রবেশ করে জুনায়েদ ইসলাম পেয়ার নামের এক ছাত্র অন্যদের খাতা দেখানোয় তাকে চড় মারতে শুরু করেন তিনি এবং ওই ছাত্রের খাতাও কেড়ে নেন। একপর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীকে শার্টের কলার ধরে টেনে বাইরে এনে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন এবং গালাগাল ও চিৎকার করে বলেন তাকে বহিষ্কার করে দেবেন। একথা শুনে শুভ নামের অন্য এক শিক্ষার্থী পেয়ারকে ইউএনও’র কাছে ক্ষমা চাইতে বললে তাকেও চার-পাঁচটি চড় মারেন ইউএনও। এ সময় দায়িত্বরত কক্ষ পরিদর্শক শিক্ষকরা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক শিক্ষিকা বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে কান্নাকাটি করেন বলে জানিয়েছেন তারই এক সহকর্মী।

ভুক্তভোগী পেয়ার বলেন, ‘সামান্য কারণে আমাকে ১৫/২০টা চড় মেরেছেন এবং খাতাও কেড়ে নিয়েছেন ইউএনও। আমি ঘটনার পর আধঘণ্টা কিছু লিখতেই পারিনি। আমার পরীক্ষাও খারাপ হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কক্ষ পরিদর্শক ও শিক্ষক বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিন পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন খারাপ আচরণ করতে কোনও কর্মকর্তাকে দেখিনি। উনার (ইউএনও) এমন রূঢ় আচরণের কোনও প্রতিবাদই আমরা করতে পারিনি।’

এ খবর লংগদু সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা শুনলে তারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আতঙ্কে পাঁচ ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাদের লংগদু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রাবেতা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

একই দিনে লংগদু সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রেও এক পরীক্ষার্থীকে চড় মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে দায়িত্বরত শিক্ষকরা ছাত্রকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার কর জানিয়েছেন, ইউএনও সবাইকে ধমক দিয়েছেন।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রশ্ন সহজ হলেও ইউএনও’র এমন আচরণে তারা ভালো পরীক্ষা দিতে পারেনি। ফেল করবে বলে তারা আশঙ্কা করছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শুধু মারধর নয়, গালাগাল, ধমক ও ফাইল ছুড়ে মারাসহ অনেক খারাপ আচরণ করেছেন ইউএনও।

এদিকে ভুক্তভোগী ইসমাঈল হোসেন নামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘শুধু গণিত পরীক্ষাই নয়, ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার দিনও তাকে এবং তার পাশের ছাত্রকে চড় মেরেছেন ইউএনও এবং গালাগাল করে বলেন, তোর মতো এমন ছাত্র লাগবে না।’

এক ছাত্রীও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ওনার (ইউএনও) আচরণ খুবই খারাপ।’

শাহীনা আক্তার নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা ভুল করতেই পারে। তাই বলে এভাবে সবার সামনে মারধর করে ঠিক করেননি ইউএনও।’

অন্য অভিভাবকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘উনি (ইউএনও) যত বড় অফিসার হোক না কেন, আমাদের সন্তানদের গায়ে হাত তোলার অধিকার নাই। সরকার যেখানে শ্রেণিকক্ষেই ছাত্রদের মারতে নিষেধ করেছেন, সেখানে এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণের প্রভাব রেজাল্টে পড়বে এবং এর দায় ইউএনওকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অভিভাবকরা।

এ বিষয়ে লংগদু বালিকা বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব ও প্রধান শিক্ষক রবিরঞ্জন চাকমা বলেন, শিক্ষার্থীকে চড় মারার বিষয়টি জানি না।তবে ইউএনও স্যার রাগারাগি করেছেন এটা শুনেছি।

আর চড় মারার কারণ জানতে চাইলে ইউএনও মোসাদ্দেক মেহ্দী ইমাম বলেন, ‘মারধর করা হয়নি। শুধু ধমক দেওয়া হয়েছে। অসুবিধা নেই, এগুলো ঠিক হয়ে যাবে।’