কেউ বিয়ে করছে না তেরোকোনার মেয়েদের!

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও): ভারত কিংবা আফ্রিকার ঘটনা নয়, খোদ বাংলাদেশেরই ঘটনা। গ্রামটির নাম তেরোকোনা। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শহরের দক্ষিণ ও পশ্চিম প্রান্তের এই গ্রামের মেয়েরা আইবুড়ো হয়ে যাচ্ছে। কারোরই বিয়ে হচ্ছে না। অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা দিনকে দিন বাড়ছেই।

তেরোকোনা গ্রামটি দেখতে ছবির মতো। যেদিকে তাকানো যায় সবুজে ঢাকা-পাখি ডাকা। গ্রামটি ঘিরে রয়েছে জমিদারি আমলের দুওরাণী- সুওরাণী নামে দুটি বড় পুকুর। রয়েছে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির- সবই। এখানে হিন্দু-মুসলিমরা সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাসও করেন। কিন্তু দুঃখ একটাই- গ্রামের কারো মনে কোনো শান্তি নেই।

সম্মানহানি ও পুলিশের ভয়ে এ গ্রামে আত্মীয়স্বজনও বেড়াতে আসে না। আত্মীয়তা করা তো দূরের কথা কেউ এ গ্রামে মেয়েকে বিয়ে দেয়া বা ছেলেকে বিয়ে করানোর কথা ভাবতেই পারে না। তাই তেরোকোনার ছেলে-মেয়েদের বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও কেউ বিয়ে করতে বা দিতে আসছে না।

তেরোকোনার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন জানালেন, গ্রামের কলঙ্ক আর অপবাদের কারণে অনেক ছেলে মেয়ের বিয়ে দেয়া যাচ্ছে না। আব্দুর রশিদ নামে আরেক বাসিন্দা জানালেন, গ্রামের অপবাদের কারণেই তার বোনের বিয়ে আটকে আছে। কেউ বিয়ে করতে চাচ্ছে না।

ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র মনসুর আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, পাঁচ-ছয়জন খারাপ মানুষের জন্য নিজেকে এই গ্রামের বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দিতে ঘৃণা আর লজ্জা হয়।

কলেজছাত্রী বীণা রাণীও খানিকটা ক্ষোভ ঝেড়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, কাকে দিয়ে ভূত তাড়াবেন? আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য এ গ্রামে এসে মাদক সেবন করেন। মাদক ব্যবসায়ীদের কিছু না বলে নিরপরাধীদের হয়রানি করেন।

মূলত, মাদক ব্যবসায়ী আর পুলিশের হয়রানির কারণেই তেরোকোনায় কেউই ভালোভাবে বসবাস করতে পারছেন না। কয়েকজন দুষ্টু আর বেপরোয়া লোকের জন্যই গ্রামটি মাদক ব্যবসার আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ কারণে গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে ‘ডাইল পট্টি’ হিসেবে। তবে পুষ্টিজাতীয় ডাল নয়, এটি মরণ-নেশা ফেনসিডিল আর ইয়াবা। গ্রামের মাত্র ৭ থেকে ৮ জন এই নোংরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে ছয়জনই বর্তমানে জেলে রয়েছে। বাকিরা কৃষিজীবী, শান্তিপ্রিয়।

মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এলাকাবাসী প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন বার বারই। কিন্তু কে শোনে কার কথা। যেখানে পুলিশই মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছে সেখানে কার কাছে প্রতিকার পাওয়া যায়?

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ বলেন, গ্রামবাসীর অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।