খাগড়াছড়িতে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার লিচুর বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে হতাশা চাষিদের
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে । তবে লিচু চাষিরা দাম পাচ্ছে না। তাদের চাহিদা অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় তারা হতাশা প্রকাশ করছেন।
লিচু খুব রসালো ফল, তাই লিচু স্থানীয় মারমা ভাষায় ”লিছুশি”, ত্রিপুরাদের কাছে ‘কতই বাথাই ’হিসেবে পরিচিত। যার বাংলা অর্থ “রস ফল” বলা হয়ে থাকে। এবার জৈষ্ঠ্য মাস ফল লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ মাসকে আবার অনেকে মধুমাসও বলা হয়। জেলার প্রতিটি লিচু গাছে শোভা পাচ্ছে থোকায় থোকায় লিচুর ফলন। কাচাঁ লিচু, আধা পাকা,লাল রঙ্গা পাকা লিচু গাছে গাছে ঝুলে থাকার দৃশ্য দেখতে কার না লাগে। পাহাড়ের লিচু ফলনের রঙ দেখতে যেমন সুন্দর, স্দাদেও অতুলনীয়।
খাগড়াছড়ি শহরে নিজ লিচু বিক্রি করতে আসা লিচু চাষী স্বপন বিকাশ ত্রিপুরা জানান, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর আমার বাগানে প্রচুর পরিমাণে লিচু ফলন হয়েছে। যা আগে কখনো এমন ফলন দেয়নি। আমার বাগানে গাছে গাছে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে, সকালে বিকেলে কিংবা যেকোন সময় বাগানে গেলে লিচুর এমন বাম্পার ফলন দেখলে, মন সতেজ হয়ে যায়। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় আমাদের চাহিদা অনুযায়ী লিচুর সঠিক দাম পাচ্ছিনা। এতে আমি হতাশ। গত বছর যেখানে ১’শ টি চায়না-২ লিচু বিক্রি হতো ২৫০-৩০০টাকা। আর চায়না-থ্রি বিক্রি হতো ৩৫০টাকা থেকে ৪০০টাকা। কিন্তুু এখন আমরা প্রতি শ’তে লিচু বিক্রি করতে হয় ৭০টাকা থেকে ৮০টাকা করে। আমরা এবারের লিচুর দামে খুব হতাশ।
লিচু ক্রেতা মো: মুজিবুর রহমান বলেন, বিগত বছরগুলোতে লিচু অনেক দামে কিনতে হতো। তবে এ বছর লিচুর দাম খুবই কম। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এটা যথেষ্ট।
প্রতিবছর পাহাড়ের লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এবার পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে লিচু রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। লিচুর ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই জেলাতে লিচু চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলে ও প্রকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবারও খাগড়াছড়িতে রেকর্ড পরিমাণ লিচুর ফলন হবে বলে তাদের আশা।
লিচু চাষি অংগ্য মারমা বলেন, লিচুগুলো বিক্রির উপযুক্ত হতে না হতেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকার লিচু ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। তারা আগাম লিচু বাগান ক্রয় করছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার জানান, চলতি বছরে খাগড়াছড়ি জেলায় ২হাজার ৯’শ ৯৯হেক্টর জমিতে এবং ১৪হাজার ৯’শ ৯৫মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হয়েছে । পাহাড়ের লিচু সুস্দাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে। পাহাড়ের লিচু সুস্দাদু ও ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় এবার এ জেলার লিচু দেশের যেকোন প্রান্তে বিক্রয় করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলায় খাগড়াছড়ির লিচু চলে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে বিগত বছর গুলোর চেয়ে এবার ফলন ভালো হয়েছে।
এজন্য এখানে লিচুর মধ্যে চায়না-থ্রি, বেদেনা, বোম্বাই ও মাদ্রাজি উল্লেখযোগ্য। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এবার এসব প্রজাতির লিচুর বাম্পার ফলন পেয়েছেন চাষিরা।
কৃষি স¤প্রসারণ উপ-পরিচালক আরও জানান, চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। কোন সময়ে কোন কীটনাশক, বালাইনাশক ব্যবহার করা উচিত সে পরামর্শ দেয়ার কারণেই এবারের লিচুর এমন ফলন দিয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন