খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে বৌদ্ধ মূর্তি উদ্ধারের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা মানিকছড়িতে গত ২১শে মার্চ শ্বেত পাথরের বৌদ্ধ মূর্তি উদ্ধার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা, মূর্তিটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হাতে ফেরত দেওয়াসহ ৫দফা দাবীতে খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলা ও মানিকছড়ি উপজেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘ। এ সাথে জড়িত মানিকছড়িতে শ্বেত পাথরের বৌদ্ধ মূর্তি উদ্ধার ঘটনায় বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘের দাবীর প্রেক্ষিতে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।

রোববার(৩রা এপ্রিল) সকালে চেংগী স্কোয়ার থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত প্রতিবাদ-সমাবেশে পর মানববন্ধন আয়োজন করেছে। এর আগে গত শনিবার(২রা এপ্রিল) দুপুর ২টায় মানিকছড়ি গিরিমৈত্রী সরকারী কলেজ সংলগ্ন ধর্মঘর এলাকায় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে” বাংলাদেশ বুদ্ধ শাসন ভিক্ষু কল্যাণ পরিষদ, মানিকছড়ি ভিক্ষু সংঘ, মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, মং সার্কেল ভিক্ষু সংঘ, সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা ও জ্যোতিসারা ভিক্ষু সংঘে”র উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

এতে উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বিভিন্ন বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘের ভিক্ষু,ভান্তে ও মহাথেরোসহ প্রায় তিন শতাধিক বৌদ্ধ ধর্মালম্বী কিশোর-কিশোরী উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক(পালি) বিভাগের প্রধান ড. জিনবোধি মহাথেরো, মানিকছড়ি উপজেলা ভিক্ষু সংঘের সাধারণ সম্পাদক উসারা ভিক্ষু, উপজেলা মারমা ওয়েলফেয়ার নেত্রী এ্যানিং মারমা, মিতালী চৌধুরী প্রমূখ।

প্রধান বক্তা ড. জিনবোধি মহায়থেরো বলেন, এই পার্বত্য অঞ্চলসহ এদেশে বিভিন্ন সময়ে পাওয়া প্রত্নতাত্তিক নির্দশনে প্রমাণিত বৌদ্ধরাই এদেশের আদিবাসী। গত ২১শে মার্চ উপজেলার ডাইনছড়ির পশ্চিমপাড়ার শ্বেত পাথরের বৌদ্ধ মূতির্র সন্ধান পেয়ে মূর্তিসহ মো: নুর আলমকে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ বৌদ্ধ মূতির বাহককে ছেড়ে দিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় শ্বেত পাথরের বৌদ্ধ মূর্তি উদ্ধার হয়েছে মর্মে আদালতে প্রেরণ করেন। এতে প্রকৃত অপরাধী তথা মূর্তি পাচরকারী মো: নুর আলম পার পেয়ে যায়। আমরা(বৌদ্ধ ভিক্ষুরা) এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। মূর্তিটির প্রকৃত তথ্য উদঘটনে নুর আলমকে আইনের আওতায় আনা, মূর্তিটি ফেরত ও দোষী পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তসহ আগামী ২৪ঘণ্টার মধ্যে বিহিত না হলে দূর্বার আন্দোলন যাবে বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘ। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি মহামুনি বৌদ্ধ বিহার এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনী নিরাপত্তা জোরদার করেন। মাটিরাংগা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ শাহনূর আলম উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২১শে মার্চ উপজেলার ডাইনছড়ি লাল টিলা এলাকায় মো: নুর আলম নামক এক ব্যক্তির ঘরে শ্বেত পাথরের বৌদ্ধ মূতির সন্ধান দিয়ে পুলিশকে অবহিত করেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়েরা লোকজন। পরে পুলিশ মূতির সাথে সরাসরি কারও সম্পৃক্ততার সত্যতা না পাওয়ায় এবং মূর্তিটি ঘরের বাহিরে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার দেখিয়ে তা আদালতে প্রেরণ করেন।

এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধপ্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এবং জড়িত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা, মূর্তিটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হাতে ফেরত দেওয়াসহ ৫ দফা দাবী জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম ঘোষণা করে ২রা মার্চ শনিবার খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন ” বাংলাদেশ বুদ্ধ শাসন ভিক্ষু কল্যাণ পরিষদ, মানিকছড়ি ভিক্ষু সংঘ, মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, মং সার্কেল ভিক্ষু সংঘ, সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা ও জ্যোতিসারা ভিক্ষু সংঘ”।

পরে পুলিশ গতকাল শনিবার রাতে অভিযুক্ত ব্যক্তি মো: নুর আলমকে আটক করেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ শাহনূর আলম সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মানিকছড়ি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ শাহনূর আলম জানান, আমরা শ্বেত পাথরের বৌদ্ধ মূতির্র বিষয়ে তথ্য পেয়ে সরমিনে গিয়ে তা পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করি এবং আইনগত অভিভাবক বা দাবীদার না পেয়ে তা আদালতে প্রেরণ করি। এখানে আইনের কোন ব্যত্তয় ঘটেনি।