গাজীপুরে হারের পেছনে ৬ কারণ দেখছে বিএনপি
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের কাছে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বড় ব্যবধানে হেরেছেন। এ পরাজয়ের পেছনে ছয়টি কারণ চিহ্নিত করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
তাদের মতে ছয়টি কারণে গাজীপুর নির্বাচনে হেরেছে বিএনপি। ১. তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক। ২. নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন। ৩. ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে না পারা। ৪. পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা। ৫. জয়ের জন্য আওয়ামী লীগের মরিয়া মনোভাব। ৬. নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ত ভূমিকা।
বিএনপি নেতাদের দাবি, গাজীপুর সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দলীয় কোন্দল ছিল। বিষয়টি গোয়েন্দা রিপোর্টেও উঠে এসেছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তেই প্রবীণ রাজনীতিক হাসান উদ্দিন সরকারকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রচার- প্রচারণা সব কিছু ঠিক-ঠাক চলছিল। কিন্তু ১৫ মে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ করেই এক সপ্তাহ আগে গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এর মধ্যেই সিটি বিএনপির বহু নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। মামলা আতঙ্কে অনেক নেতাকর্মী এলাকা ছাড়া হন।
পরে নির্বাচনের নতুন শিডিউল ঘোষণা করলেও নেতাকর্মীরা আর আগের মত নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে ফিরেননি। ভয় আর আতঙ্ক থেকে অনেক আড়ালে চলে যান। সেই সুযোগে প্রশাসনের সহায়তার আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয় ছিনিয়ে নেয় বলে মনে করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতীকে ৪ লাখ ১০ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার পান এক লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট। তাতেই হাতছাড়া হয় গাজীপুর সিটিতে ধানের শীষের মেয়র।
গাজীপুর সিটিতে গত নির্বাচনে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক এমএ মান্নান প্রায় দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করেন। তবে সেই নির্বাচন হয়েছিল নির্দলীয় প্রতীকে। টেলিভিশন প্রতীকে মান্নান পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৬৮ হাজার ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ লাখ ১২ হাজার ভোট।
এবারের নির্বাচনে পরাজয়ের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকার গাজীপুরে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা রাষ্ট্রের সকল যন্ত্রকে ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন নির্বাচনের নামে শুধু একটি তামাশা হয়েছে। ভোট ডাকাতির নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করে তা প্রয়োগ করেছে। ফলে আমরা গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি।’
জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘দেশের মানুষ সবই জানে গাজীপুর সিটিতে কেমন ভোট হয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন ভোট ডাকতি করছে। দিনে-দুপুরে ডাকাতি করছে। এভাবে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে বেশিদিন চলতে পারবে না তারা। মানুষের ভোটাধিকার আদায়ের জন্য চেষ্টা করছি।’
নির্বাচনে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঠে না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামবে কিভাবে? নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর থেকে গ্রেফতার শুরু হয়ে যায়। এজেন্টদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়, গ্রেফতারের ভয় দেখানো হয় সারাক্ষণ।’
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা বলেন, ‘দলীয় পুলিশ ও ডিবির সহায়তায় এখন আওয়ামী লীগ নির্বাচন করছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করছে না, নির্বাচন করছে পুলিশ আর ডিবি। এতে পুলিশ আর ডিবিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সহয়তা করছে।’
তবে আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে দেশের মানুষ আবার চ্যালেঞ্জে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আবার যদি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীদের ভোটারদের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়, তাহলে মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে।’
গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল রিজভী বলেন, ‘গাজীপুরে ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি। সেখানে ভোটার ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং এসপি হারুন।’
জানতে চাইলে দলের যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘অনেক নেতাকর্মী ভয়ে কেন্দ্রে যাননি। যারা ছিল তাদের মধ্যেও অনেকেই আবার সাহসের অভাবে মাঠ ছেড়েছেন। কারণ নির্বাচনটা তো আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা করেনি। পুলিশ প্রশাসন আর নির্বাচন কমিশন করেছে। সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা কি করবে?’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে আওয়ামী নির্বাচন করছে। এই (গাজীপুর সিটি নির্বাচন) নির্বাচনটা খুলনা সিটি নির্বাচনের সঙ্গে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করার জন্য তারিখটা পিছিয়ে দিয়েছে। কারণ গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন্দল ছিল। পরাজয় নিশ্চিত জেনেই তারা তারিখ পরিবর্রতন করেছে।’
আসন্ন তিন সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে আলাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিত্য নতুন কৌশল নিচ্ছে। আমরা বুঝতে চেষ্টা করছি, তারা আর কত কৌশল নিতে পারে। কারণ এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমরা জাতীয় নির্বাচনে যাব না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন