বিদায় চ্যাম্পিয়ন! ৮০ বছর পর এভাবে হৃদয় ভাঙল জার্মানির!

এভাবে দুনিয়াটা কারো মাথার উপর ভেঙে পড়ে! পড়তে পারে? আগে থেকে কেউ ভাবতে পারে? ম্যাচশেষে জার্মানদের দেখে মনে হচ্ছিল তারা নিজেরাও বিশ্বাস করতে পারছে না যে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে তাদের বিদায় হয়ে গেছে। এবং তা বড় করুণভাবে। অবিশ্বাস্য সেই ঘটনাই বুধবার ঘটেছে কাজানে। ৮০ বছরের মধ্যে প্রথমবার বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকেই জার্মানি বিদায় নিল। কিন্তু কোন জার্মানি? সেই জার্মানি যারা ২০১৪ সালে ব্রাজিল থেকে জিতেছিল শিরোপা। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ও ফেভারিট হিসেবে এসেছিল রাশিয়ায়।

দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে বুধবার গ্রুপ ‘এফ’ এর খেলায় স্টপেজ টাইমে ২ গোল হজম করল তারা। প্যানিক হয়ে গিয়েছিল একটি গোলের জন্য। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল পায়নি ৫টি পরিবর্তন নিয়ে এই ম্যাচ খেলতে নামা জার্মানরা। গেল গ্রীষ্মের কনফেডারেশন্স কাপ জেতা দলটির জালে এরপর স্টপেজ টাইমের ৩ ও ৬ মিনিটে দুবার বল জড়াল কোরিয়ানরা। ওদিকে সুইডেন জার্মানির সমান ৩ পয়েন্ট নিয়ে একাতেরিনবার্গে মেক্সিকোর বিপক্ষে নেমেছিল একই সময়ে। ওখানে তারা ১৯৫৮ বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি করে জিতল ৩-০ গোলে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলো সুইডিশরা। মেক্সিকো রানার্স আপ। জার্মানির বিদায়। তাও গ্রুপের চতুর্থ স্থান নিয়ে! তাদের সমান ৩ পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে কোরিয়া তৃতীয়। বিশ্বকাপের তিন দেখায় জার্মানির বিপক্ষে এই প্রথম জয় কোরিয়ানদের। আর ১৯৩৮ বিশ্বকাপের পর প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়া জার্মানরা কিংবর্তব্যবিমুঢ়! প্রত্যেকটি জার্মান মুখ যেন একেকটি নিশ্চল পাথর!

বিশ্বকাপ ও কনেফেডারেশন্স কাপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপে আসা। আর কি লাগে? গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে মেক্সিকানদের কাছে হারলেও জার্মানির ভরসা ছিল ইতিহাসে। ১৯৯০ থেকে কখনোই প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচ না জিতে মাঠ ছাড়েনি তারা। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপ সফল কোচ জোয়াকিম লোর জার্মান দলের জন্য ছিল না।

প্রথমার্ধে তাদের চ্যাম্পিয়নের মতো লাগেনি। উল্টো একটি গোল খেতে বসেছিল ম্যানুয়েল নয়ার দ্বিতীয় চেষ্টায় বাঁচিয়েছেন। ভুলটা তারই ছিল। যেমন শেষটায় উপরে উঠে যাওয়ায় দ্বিতীয় গোলটি তার ফাঁকা জালে কোরিয়ানরা দিয়ে কমেডির ষোলকলা পূর্ণ করল। প্রথমার্ধের মতো নির্ধারিত ৯০ মিনিট ০-০। এরপর স্টপেচ টাইমের তৃতীয় মিনিটে কিম ইয়ং-গং গোল করলেন। অফ সাইড। ভিএআর বলল ‘না’। জার্মানির আর আশা থাকে না তখন।

গোলকিপার নয়ার আগের বিশ্বকাপে উপরে উঠে খেলার জন্য বাহবা পেয়েছিলেন। এবার শেষটায় তিনিও গোলের চেষ্টায় নিজের জায়গা ছেড়ে কোরিয়ানদের ঘরে। জু সে-জং সুযোগ বুঝে লম্বা বল দিলেন। সন হিয়াং-মিন সেই বল তাড়া করে খালি জালে বল জড়িয়ে দলকে নিয়ে প্রবল উৎসবে মাতলেন। হতভম্ব জার্মানদের স্টপেজ টাইমের ৩ ও ৬ মিনিটে গোল হজম করার পর চোখে অবিশ্বাস ছাড়া আর কিছু ছিল না!

শেষ ৫ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে জার্মানি চতুর্থ দল হিসেবে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিল। আর ইতালি ও স্পেনের পর তারা তৃতীয়। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে একটি গোল পেতে পারতো জার্মানি। সুইডেনের বিপক্ষে জয়ে যেমনটি পেয়েছিল। কিন্তু ম্যাট হামেলস কিভাবে যে মিসটা করলেন!

৪-২-৩-১ সমাধান খুঁজতে গিয়ে জোগি লো ফিরিয়ে এনেছিলেন সামি খেদিরা ও মেসুত ওজিলকে। ফর্ম হারানো থমাস মুলারকে বসিয়ে দিয়েছিলেন। ২০১২ সালের ইউরোর সেমির পর এই প্রথম কোনো ম্যাচের একাদশ মিস করেছেন গোলমেশিন মুলার। ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে নয়ার তিন ম্যাচেই খেললেন। এবং তার হাত থেকে বল ছুটে গেলে ১৯ মিনিটে পিছিয়ে পড়ার অবস্থা জার্মানদের। বাঁচিয়েছেন মুলারই দ্বিতীয় চেষ্টায়। সন কষ্ট পেলেন।

অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তারপরও একেবারে চূড়ান্ত ফিনিশিং দেওয়ার মানুষটা জার্মানরা পেল না। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর তিন মিনিটে জশুয়া কিমিচের ক্রসে গোরেজকা যে হেড নিয়েছিলেন ওটাই ছিল সবচেয়ে বড় হুমকি তখন পর্যন্ত। গোলকিপার চো হিয়েন-উ রক্ষা করেছেন কোরিয়ানদের।

এরপর ওয়েরনারের ভলি বাইরে দিয়ে যায়। কিন্তু চাপে ছিল কোরিয়া শেষে। সুইডেনেরে গোলের কারণে জার্মানির গোল লাগতো। লো নামিয়ে দিলেন মারিও গোমেজ ও মুলারকে। তাতে কি কাজ হলো কোনো? উল্টো আক্রমণের মুখেই পড়ল জার্মানি। এবং এটা বলতেই হয়, স্টপেজ টাইমে যে করুণ পরিণতি হয়েছে জার্মানদের সেটার শুরুটা হয়তো আরো আগেই হতে পারতো।

গ্যারি লিনেকার কি বলবেন এবার? ২২ জনই একটি ফুটবল নিয়ে মাঠে লড়ে, শেষে জার্মানি জেতে কিন্তু চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়ার নতুন ইতিহাস গড়ে! আহ! ফুটবল কখনো কখনো বড় হৃদয় বিদারক খেলা!