গৃহযুদ্ধের হুমকি দেয়া জামায়াত নেতার আত্মসমর্পণ
পাঁচ বছর আগে মানতবাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার রায়ের আগে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরুর হুমকি দেয়া দলের সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ ধরা দিয়েছেন।
২০১৩ সালে তিন মাসের কারাদণ্ড হওয়ার পর সাড়ে পাঁচ বছর পালিয়ে অবশেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করেলেন আযাদ। বুধবার সকাল ১০টার দিকে তিনি সেখানে যান।
আদালতে জামায়াত নেতার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন আব্দুস সুবহান তরফদার ও মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
কাদের মোল্লার রায়ের আগে আদালত অবমাননাকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে ২০১৩ সালে আযাদ ছাড়াও জামায়াতের সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খানকেও তিন মাসের কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা জরিমানা করে ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার রায়ের আগের দিন রাজধানীর মতিঝিলে এক সমাবেশে জামায়াত নেতারা দেশে গৃহযুদ্ধের হুমকি দেন।
আযাদ সেদিন বলেন, ‘একটা রায়ই শেষ নয়। রায়ের পর রায়, এরপর বহু প্রতিক্রিয়া আছে। বিষয়টি হালকাভাবে দেখলে চলবে না। দেশকে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচাতে হলে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই।’
ট্রাইব্যুনালে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার দুই দিন পর ২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের রফিকুল, আজাদ ও সে সময়ের ঢাকা মহানগর শাখার সেক্রেটারি সেলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবমাননার অভিযোগ এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে নোটিশ জারি হয়।
কিন্তু জামায়াত নেতারা কেউ ট্রাইব্যুনালে হাজির হননি আর তাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ট্রাইব্যুনাল সে সময় বলে, ‘জামায়াত নেতারা ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে দেশে গৃহযুদ্ধ ও ট্রাইব্যুনালকে বিভিন্ন হুমকি দেন। তারা ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে বিতর্কিত বক্তব্য দেন, যা আদালত অবমাননার শামিল।’
ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে অপ্রত্যাশিতভাবে মৃত্যুদণ্ডের বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার পর মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে দেশজুড়ে শুরু হয় গণজাগরণ। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩ সংশোধন করে আসামিদের পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ রাখা হয়।
আর আপিলে পরে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড হয়। এরপর একে একে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, আমির মতিউর রহমান নিজামী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসি হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির রায় হওয়ার পর জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুস সুবহান এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিল চলমান।
মাঝে ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় হলে জামায়াত দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সহিংতা দেখালেও অন্য নেতাদের রায়ের পর তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। সব শেষ মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর মাঠেও নামেনি জামায়াত নেতারা।
ইদানীং জামায়াতের নেতাদের হুমকিসুলভ বক্তব্যও কমে এসেছে। তারা মূলত আত্মগোপনে থেকে দল পরিচালনা করছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন