জনসনের টিকা স্থগিত যুক্তরাষ্ট্র-দ.আফ্রিকা-ইইউতে
টিকা নেওয়ার পর বেশ কয়েকজনের শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ায় জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার প্রয়োগ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে মার্কিন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সতর্কতাকে তারা গুরুত্ব দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নেও (ইইউ) এই টিকার প্রয়োগ স্থগিত করা হয়েছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে এই টিকা নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত মোট ছয় জনের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে জনসনের টিকা নেওয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধলেও ইইউ ও দক্ষিণ আফ্রিকায় এখনো তেমন ঘটনা ঘটেনি। পুরো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জানিয়েছে, জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নেওয়ার পর এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট ছয়জন রক্ত জমাট বাঁধার শিকার হয়েছেন। আক্রান্তরা সবাই নারী এবং তাদের বয়স আঠারো থেকে আটচল্লিশের মধ্যে।
ফুড অ্যান্ড ড্রাগ বিভাগের বায়োলজিক ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড রিসার্চ কেন্দ্রের পরিচালক ডা. পিটার মার্কস এবং সরকারি রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের প্রধান উপপরিচালক ডা. অ্যানি স্চুচ্যাট এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘অতি সাবধানতা অবলম্বনে আমরা এ টিকার ব্যবহার বন্ধ করছি। এ মুহূর্তে এই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া খুব বিরল ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে।’
জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকায় রক্ত জমাট বাঁধার অভিযোগের ঘটনায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করে বলেছেন, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের টিকাদানের বিরতি দেওয়ার প্রস্তাবে যারা টিকা নিতে অনীহা দেখান, তাদের আরও নিরুৎসাহিত করবে।
সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ লাখের কাছাকাছি মানুষ জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নিয়েছেন এবং আরও ৯০ লাখ ডোজ দেশের নানা রাজ্যে পাঠানো হয়েছে।
এ সপ্তাহে ইইউভুক্ত দেশগুলোয় টিকা সরবরাহের কার্যক্রম শুরু করেছিল জনসন অ্যান্ড জনসন। ইইউর দেশগুলোয় টিকা পাঠানোর ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে জনসন অ্যান্ড জনসন জানায়, তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে টিকা সরবরাহ স্থগিত করেছে। যদিও ইইউ এখনো এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাদের বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে লক্ষ রাখছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম টিকা সরবরাহ করেছিল জনসন অ্যান্ড জনসন। দেশটির মানুষকে এ টিকা দেওয়ার পর এখনো রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার কোনো ঘটনা জানা যায়নি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে দেশটির প্রায় তিন লাখ স্বাস্থ্যকর্মী জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নেন।
জনসন অ্যান্ড জনসনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের নীতিমালা অনুসরণ করে স্বেচ্ছাসেবকের অসুস্থতার বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এটি মূল্যায়ন করছে স্বতন্ত্র ডেটা সেফটি মনিটরিং বোর্ড (ডিএসএমবি)। এ ছাড়া আমাদের নিজস্ব চিকিৎসকেরাও এ তথ্য মূল্যায়ন করবেন।’
গত মাসে জনসন অ্যান্ড জনসনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রে মোট ছয়টি করোনার টিকা নিয়ে পরীক্ষা চলছে। অন্য টিকাগুলোর দুই ডোজ প্রয়োজন হলেও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার মাত্র এক ডোজ প্রয়োজন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ টিকার দ্রুত পরীক্ষা শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছিল।
এদিকে জনসন অ্যান্ড জনসনের মতোই ইউরোপের বাজারে সমস্যায় পড়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা। দুটি টিকার ক্ষেত্রেই একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এতে রূপান্তরিত ও নিরীহ ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যবহারের ফলে কয়েকটি দেশে খুব কমসংখ্যক রক্ত জমাট বাঁধার খবর পাওয়া যায়। এরপর অনেক দেশ ওই টিকা ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। কয়েকটি দেশে টিকাটি কেবল বয়স্ক ব্যক্তিদের দেওয়া হচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন