তানভীরের উদ্যোগে স্কেলেটন সেটের বোন’স পেল বশেমুরবিপ্রবির এএসভিএম বিভাগ
এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন (এএসভিএম) বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কয়টি কোর্স আছে তারমধ্যে এনাটমি অন্যতম। প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে থাকা এই কোর্সে প্রাণীর গাঠনিক কাঠামো বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ানো হয়। প্রাণীর গাঠনিক কাঠামো তথা হাড়ের গঠন বিষয়ক জ্ঞান থাকা একজন ভেটেরিনারি পড়ুয়া শিক্ষার্থীর জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
সে উপলব্ধি থেকে গত দুই বছর আগের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ছয়-সাত মাস আগে উদ্যোগ নেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) এর এনিম্যাল সায়েন্স এবং ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের প্রথম ব্যাচের (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ হ্যারী। তানভীরের পরিকল্পনা ছিলো বিভাগকে একটি বড় প্রাণীর স্কেলেটন সেট উপহার দিবে।
তানভীরের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলে। তিনি বলেন, “বর্ষার তখন প্রায় শেষ সময়। গ্রামে রোগাক্রান্ত হয়ে একটি ষাড় গরু মারা যায়। মারা যাওয়ার পর ষাড়টিকে বর্ষার ভরাডুবিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। আমি সে মৃত ষাড় গরুটিকে নৌকা নিয়ে প্রায় চার ঘন্টা সময় নিয়ে খুঁজে বের করি। তারপর শুরু হয় পরিশ্রমের প্রথম ধাপ।
প্রাথমিকভাবে হাড় ও মাংস আলাদা করি। কিন্তু সদ্য মারা যাওয়া গরুর হাড় মাংস এতো সহজে আলাদা করা সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই হাড়ে লাগানো মাংস পচিয়ে নরম করে আলাদা করতে হয়েছে। এজন্য কিছুদিন মাটির নিচে পুঁতে রেখেছিলাম। তারপর ভালোভাবে হাড় ও মাংস আলাদা করে গরম পানিতে কয়েক ধাপে সিদ্ধ করতে হয়েছে জীবাণুমুক্ত করার জন্য। এরমধ্যে তৈরি হয়েছিলো প্রচন্ড রকম দুর্গন্ধ। যে গন্ধে যে কেউ কাছে আসলেই বমি আসার উপক্রম হতো।
এরপর হাড় বা বোন গুলো নিয়ম করে রোদে শুকিয়েছি প্রায় মাসখানেক, কিছুটা দুর্গন্ধ কমার পর হাড়গুলোকে বস্তাবন্দি করে কিশোরগঞ্জ থেকে গোপালগঞ্জ নিয়ে আসি। গোপালগঞ্জ আনার পর আরো প্রায় পাঁচ মাস নিয়মিত যত্ন নিয়েছি।
বোন গুলো নিয়মিত রোদে দেওয়া, সিরিশ পেপার দিয়া বার্নিশ করা, পলিশ করা, রং দেওয়া সহ বিভিন্ন ধাপের মধ্যে দিয়ে ব্যবহার উপযোগী হওয়ার পর এই বোনগুলো আমি আমার এএসভিএম বিভাগে জমা দিই। খুব শীগ্রই এটিকে আমাদের শ্রদ্ধেয় স্যার ম্যামদের দিকনির্দেশনায় স্কেলেটাল ফ্রেইম করা হবে। আশা করি সবাই এনাটমিক্যাল জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি বিষয়টিকে সবাই উপভোগ করবে। এই বোনস প্রস্তুত করা আমার এক বিশাল কষ্টের ফল।
এ বিষয়ে এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের এনাটমির শিক্ষক অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. মার্জিয়া আফরোজ প্রিয়া বলেন, “নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিভাগ হিসেবে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের বিভাগে স্কেলেটন এর পর্যাপ্ত সংগ্রহ নেই। তানভীর এর এই উপহার আমাদের বিভাগের জন্য মহা মূল্যবান বলব আমি। নতুন শিক্ষার্থীরা এগুলো দেখে শিখতে পারবে, স্কেলিটন প্রস্তুত করে শিক্ষার্থীরা এটা নিয়ে স্টাডি করতে পারবে।
বোন স্কেলেটনের জন্য প্রস্তুত করতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগে, তানভীর একাই নিজের উৎসাহ থেকে এটা করেছে। যা অন্যান্য স্টুডেন্টদের মাঝেও উৎসাহ জোগাবে। আগে অনেক শিক্ষার্থী প্রাকটিকালি কাজ করতে ভয় পেত এখন তারা এখান থেকে শিখে নিজেরা আগ্রহ নিয়ে অন্যান্য এনিম্যাল এর বোন কালেক্ট করে স্কেলিটন প্রস্তুত করার সাহস পাবে। তানভীরকে আমার ও বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ ধন্যবাদ, এছাড়া এ কাজে ওকে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন