পরীমনির মায়ের মৃত্যু আগুনে পুড়ে, বাবাকে করা হয় খুন
পুরোনাম শামসুন্নাহার স্মৃতি হলেও সবাই তাকে চেনে পরীমনি নামেই। অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও অভিনয়ের চেয়ে বিকৃত জীবন যাপন ও খুব অল্প সময়ে বিপুল অর্থ সম্পদের জন্যই বেশি আলোচনায় পরীমনি। খুব ছোট বেলায় মাকে হারানো পরীমনি বড় হয়েছেন নানা বাড়িতে।
পরীর জন্ম ১৯৯২ সালের ২৪ অক্টোবর। নানাবাড়ি থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকায় আসেন। এরপর লেখাপড়া চালিয়ে না গেলেও বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচ শেখেন পরীমনি।
পরীমনির নানা সিংহখালী গ্রামের শামসুল হক গাজী। তিনি ভগীরথপুর স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন জানান, ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকের কথা। তখন পরীমনির বয়স মাত্র তিন বছর। তার বাবা মনিরুলের তখন ঢাকায় পোস্টিং। সেখানে একটি বাসায় আগুনে পুড়ে গুরুতর দগ্ধ হন স্মৃতির মা সালমা। ঢাকায় কিছুদিন চিকিৎসার পর তাকে নানা শামসুল হক গাজীর কাছে রেখে যান মনিরুল। এর দুই মাস পর মারা যান সালমা।
এরপর থেকে পরীমনিকে তার নানা-নানি ও খালারা লালন-পালন করেন। নানি মরহুমা ফাতিমা বেগম দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন।
স্মৃতি ওরফে পরীমনি সর্ম্পকে তিনি বলেন, ছোট থেকে স্মৃতি ভালো ছাত্রী ছিল। তার নীতি-নৈতিকতাও ভালো ছিল। পঞ্চম শ্রেণিতে স্কুল থেকে একমাত্র সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। এখন পর্যন্ত এই স্কুল থেকে আর কেউ বৃত্তি পায়নি। দেখতে খুব সুন্দর ছিল স্মৃতি। মা হারানো এতিম শিশুটিকে এলাকার সবাই অনেক আদর করত।
পরিমণির ছোট খালা তাসলিমা পাপিয়া বলেন, ২০১২ সালে খুন হন স্মৃতির বাবা পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম। কোনো একটা কারণে তার চাকরি চলে গিয়েছিল। তখন তিনি গ্রামের বাড়িতে থেকে ব্যবসা করতেন। আমরা শুনেছি, সেই ব্যবসার বিরোধ নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।
পরীমনি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মডেলিং দিয়ে। এরপর নাটকে অভিনয় শুরু করেন। তবে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগেই আলোচনায় আসেন বিতর্কিত এই অভিনেত্রী। চলচ্চিত্র নায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর প্রথম দিকেই ২৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন পরীমনি।
২০১৫ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ভালোবাসা সীমাহীন’। স্বল্প ক্যারিয়ার জীবনে খুব বেশি ছবিতে অভিনয় করেননি পরীমনি, তবে বনানীতে ফ্ল্যাট ও কোটি টাকার বিলাশবহুল গাড়ির মালিকানা, পাঁচ তারকা হোটেলে জন্মদিন পালন ও বিভিন্ন সময়ে তার দেশের বাইরে ভ্রমণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বহুবার। কিন্তু এত সব কিছুর মালিকানার পেছনের আয়ের উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি তার। সাংবাদিক তামিম হাসানের সাথে ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পরীমনির বাগদান হয়। পরবর্তীতে তাদের এনগেজমেন্ট ভেঙে যায়।
২০২০ সালের ৯ মার্চ তিনি পরিচালক কামরুজ্জামান রনিকে তিন টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন, সেটাও টেকেনি। ওই বছরেই বিচ্ছেদ হয় তাদের।
তবে এর আগেও গুঞ্জন উঠেছিল অভিনয়ে আসার আগেও নাকি বিয়ে করেছিলেন পরীমনি। ২০১২ সালে সৌরভ নামের একজনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। সে সময়ের কিছু ছবিও ভাইরাল হয়েছিল। তবে পরীমনি সব অস্বীকার করেন।
তবে সব কিছু ছাপিয়ে আবারো আলোচনায় আসেন ৯ জুন মধ্যরাতে সাভারে অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে। এরপর প্রধান আসামি করে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচজনের নামে মামলা করেন তিনি। পরে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
সবশেষ ৪ আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় র্যাব অভিযান শেষে তাকে গ্রেপ্তার করে। বাসায় অনুমোদনহীন মিনিবার পরিচালনা ও মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেছে র্যাব। এ মামলায় বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সূত্র: সময় সংবাদ
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন