পাবনায় জ্যান্ত পোকামাকড় খেয়ে ভাইরাল আকরাম ওরফে ‘ডিসকভারী আকরাম’
পোকামাকড় খাওয়ার দৃশ্য বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা যায় হরহামেশা। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো নাগরিক চোখের সামনে বিভিন্ন রকমের জ্যান্ত সাপ, ইঁদুর, ব্যাঙসহ পোকামাকড় চিবিয়ে খাচ্ছেন এমন দৃশ্যের কথা কল্পনাও করতে পারে না অনেকে। তবে, অবিশ্বাস্য হলেও ঘটনাটি সত্যি। একরাম প্রামাণিক (৫০) নামে এমনই একজন মানুষের দেখা মিলেছে উত্তর জনপদের জেলা পাবনায়।
তিনি খেয়ে চলেছেন জ্যান্ত সাপ, ব্যাঙ, বিচ্ছু, কেঁচো, তাজা মাছসহ নানা রকমের পোকামাকড়। ডিসকভারী চ্যানেল দেখে তিনি এসব খাওয়া শিখেছেন ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। আর ডিসকভারী চ্যানেলের মতো জ্যান্ত পোকামাকড় খেতে পারেন বলে সবার কাছে এখন তিনি ‘ডিসকভারী আকরাম’ নামে পরিচিত। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন তিনি।
পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের ঘোড়াদহ গ্রামের মৃত জব্বার প্রামাণিকের ছেলে একরাম প্রামাণিক ওরফে “ডিসকভারী আকরাম”। যিনি পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। ৪ কন্যা সন্তানের জনক তিনি। ২ মেয়েকে দিয়েছেন বিয়ে। অন্য ২ মেয়ে লেখাপড়া করছে। নিজ পেশা ছেড়ে পোকামাকড় খাওয়ার নেশায় মত্ত হয়ে উঠেছেন ডিসকভারী আকরাম।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সরেজমিনে একরাম ওরফে ডিসকভারী আকরামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পোকামাড়ক খাওয়ার ঘটনা স্বচক্ষে দেখতে তার বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন নানা শ্রেণী পেশার উৎসুক মানুষ। কিছুক্ষণ পর তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়িতে আগে থেকে ধরে রাখা জ্যান্ত সাপ, কেঁচো, ব্যাঙ, তাজা বোয়াল ও টাকি মাছ, কুঁচে মাছ, ইঁদুর, কাঁকড়া খেয়ে দেখান। সব পোকামাকড় থেকে একটু একটু করে খেয়ে দেখান উপস্থিত সবাইকে। এ সময় সবাই হতবাক হয়ে যান।
একান্ত আলাপচারিতায় একরাম প্রামাণিক ওরফে ডিসকভারী আকরাম গণমাধ্যমকে জানান, জীবনের শুরুটা কাঠমিস্ত্রি হিসেবে চললেও মাঝপথে এসে তিনি এন্টেরিয়র কাজে সম্পৃক্ত হন। বিয়ে করেছেন ৩০ বছর আগে। সংসারে স্ত্রী গৃহিনী। তিনি বলেন, ২০০২ সালে একটি সাদাকালো টেলিভিশন কিনে দেখা শুরু করেন ডিসকাভারী চ্যানেল। সেখানে নিয়মিত দেখতে থাকেন বিদেশীদের পোকামাকড় খাওয়া।
২০০৩ সালে শুরুটা হয় জ্যান্ত কাঁকড়া খাওয়া দিয়ে। পর্যায়ক্রমে তিনি কেঁচো, কাঠের পোকা, সাপ, কুচিয়া, তেলাপোকা, ইঁদুর, বিভিন্ন প্রজাতির কাঁচা মাছ, গোবরের পোকা. শামুক, ঝিনুকসহ নানা পোকামাকড় খাওয়া আয়ত্ব করতে থাকেন। এখন তিনি যেকোনো কিছু জ্যান্ত খেতে পারেন বলেন দাবি তার। এগুলো খাওয়ায় তার শরীরের মধ্যে কোনো রোগ বালাই বা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি তিনি এসব পোকামাকড় খেতে পারেন। কোনো সমস্যা হয় না বলেও জানান তিনি।
ডিসকভারী আকরাম আরো বলেন, এলাকায় কাঠমিস্ত্রির কাজ ছেড়ে এক সময় চলে যান ঢাকাতে। সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশন কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান বিচারপতির ভবন, এনএসআই কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় এন্টেরিয়র কাজ করেছেন। বর্তমানে সব কাজকর্ম ছেড়ে তিনি এই পোকামাকড় খাওয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। অভাবী সংসারে বিষয়টি নানাভাবেই দেখছেন পরিবারের স্বজনসহ আশপাশের মানুষ। পোকামাকড় খাওয়ার পর যখন তিনি পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার পরামর্শের জন্য ঢাকাতে অবস্থানকালে বিভিন্ন চিকিৎসক ও ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পরামর্শ চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। কেউ তাকে সঠিক পরামর্শ দেয়নি।
ডিসকভারী আকরামের দাবী, তিনি একজন দিন দরিদ্র মানুষ। খুব কষ্টে তার সংসার চলে। দুটো কন্যার বিয়ে দিয়েছেন। আরো দুই কন্যা রয়েছে। তারা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়ালেখা করে। নিজের ক্ষমতা নেই একটি স্মার্ট বা অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার। সরকারি বেসরকারীভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবং সঠিক গাইড লাইন পেলে তিনি দেশ থেকে বিদেশের মধ্যে আলোড়ন তুলতে চান।
তিনি বলেন, বাঙালী লাঠি, বৈঠা, সুরকি ফলা আর অনুন্নত অস্ত্র নিয়ে লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে একাত্তরে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। তেমনিভাবে আমিও বিদেশীদের জানাতে চাই, শুধু তোমরা নয়, আমরা বাঙালীরাও পারি। এজন্য সরকারি, বেসরকারি আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি সঠিক দিকনির্দেশনা দরকার।
তার স্ত্রী মুর্শিদা খাতুন বলেন, ৩০ বছরের সংসার জীবন। ২০/২২ বছর আগে তাকে এই নেশায় ধরে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি পোকামাকড় খাওয়া চ্যানেল দেখে এটা অভ্যাস করতে থাকেন। এটা এখন তার ধ্যান জ্ঞানে পরিণত হয়েছে। পোকামাকড় খাওয়া নিয়ে আমার স্বামীর বা আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
দর্শনার্থী সিরাজগঞ্জের তাড়াশ থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী বাবলু মিয়া বলেন, লোকমুখে শুনে দেখতে এসেছি। বিষয়টি অবিশ্বাস্য ভেবেই দেখতে এসে তার সত্যতা পেলাম। মানুষ যে ইচ্ছে করলেই সব পারে, এটাই একটা উদাহরণ।
স্থানীয়দের দাবী, সরকারি বেসরকারিভাবে আকরামকে পৃষ্ঠপোষকতা দিলে হয়তো এই পাগলামিটা দেশের জন্য বিশ্বের কাছে রোল মডেল হতে পারে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশেও ডিসকভারী চ্যানেলের দর্শক হতে পারবে অন্যদের জলজ্যান্ত অভিনেতা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন