প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন হচ্ছে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর তেঁতুলতলা কলাবাগান মাঠে থানা ভবন নির্মাণ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠ বর্তমান অবস্থায় যেভাবে রয়েছে সেভাবেই থাকবে। এখানে কোনো থানা ভবন কিংবা অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হবে না। বর্তমানের মতো এলাকাবাসী এটি ব্যবহার করবে। তবে পুলিশের সম্পত্তি হিসেবে পুলিশ জায়গাটির দেখভাল করবে।
এর আগে গতকাল বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠে আপাতত থানা নির্মাণ করা হবে না, বিকল্প জায়গা খোঁজা হচ্ছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কলাবাগান তেঁতুলতলা যে মাঠ নিয়ে আন্দোলন চলছে, সেটি কখনোই মাঠ ছিল না। এটি একটি খাসজমি। জেলা প্রশাসক এটি বরাদ্দ দিয়েছেন থানা ভবন নির্মাণের জন্য।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় থানা ভবন নির্মাণ অত্যন্ত দরকার। যে কারণে ২৭ কোটি টাকায় বরাদ্দ পেয়ে এ টাকা দিয়ে জায়গাটি কেনা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। থানা ভবন নির্মাণের জন্য এর চেয়ে সুন্দর জায়গা পেলে বিকল্প সিদ্ধান্ত হবে। আপাতত এটি পুলিশের সম্পত্তি। তবে যেহেতু আবেদন হয়েছে এটি খেলার মাঠের জন্য, সে কারণেই বিকল্প খোঁজা হচ্ছে। আপাতত থানা ভবনের নির্মাণকাজ হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, পরিবেশবিদ রিজওয়ানা হাসান এবং স্থপতি ইকবাল হাবিবসহ পরিবেশবিদরা।
বৈঠক শেষে বের হয়ে মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির সাংবাদিকদের জানান, কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠের নির্মাণকাজ আপাতত বন্ধে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিকল্প কোনো স্থানে থানা ভবন নির্মাণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ সময় বলেন, থানা ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসীর সই করা একটি স্মারকলিপিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের মুখে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই মাঠে কলাবাগান থানা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। মাঠের জমি ২৭ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন এ কথা জানান।
ডিসি বলেন, সরকার ডিএমপিকে দেশের প্রচলিত সব আইনকানুন মেনে এই জমি বরাদ্দ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ডিএমপি কোনো ব্যক্তির বা সংস্থার জমিতে বেআইনিভাবে থানা ভবন নির্মাণ করছে না।
গত ৩১ জানুয়ারি মাঠটিতে তারকাঁটার বেড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে পুলিশ। খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত জায়গাটি কলাবাগান থানা ভবন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে থানা ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন এলাকাবাসী। তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার অন্যতম আন্দোলনকারী ও সমাজকর্মী সৈয়দা রত্না এবং তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে আন্দোলনরত অবস্থায় গত ২৪ এপ্রিল সকালে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। সারা দিন তীব্র প্রতিবাদের মুখে মধ্যরাতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই মাঠ রক্ষায় এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ও বিশিষ্টজনরাও প্রতিবাদ ও মানববন্ধন চালিয়ে যাচ্ছেন সেখানে। তারা দাবি করছেন, খেলার মাঠে থানা ভবন করা যাবে না। আর যদি করতে হয়, তাহলে বিকল্প খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিকল্প খেলার মাঠের ব্যবস্থা করার বিষয়টি ডিএমপির এখতিয়ারভুক্ত নয় জানিয়ে ডিসি ফারুক ডিএমপির পক্ষ থেকে পরামর্শ দেন, প্রস্তাবিত থানার জায়গা তেঁতুলতলা মাঠ থেকে কিছু দূরে কলাবাগান মাঠ রয়েছে। সেখানে বাচ্চাদের খেলাধুলাসহ সামাজিক অনুষ্ঠান করার সুযোগ রয়েছে।
জনস্বার্থে কলাবাগান থানার জন্য ধানমন্ডি মৌজার শূন্য দশমিক ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইনের সব বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়েছে। ওই জমি সরকারি সম্পত্তি ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন।
ডিসি জানান, কলাবাগান থানার ওই জমি অধিগ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। সরকারি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে রাজউকের কোনো আপত্তি নেই মর্মে ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। মাঠের জায়গাটি প্রস্তাবিত ভূমি ব্যবহার আরবান রেসিডেনসিয়াল জোন হিসেবে চিহ্নিত থাকায় নগর উন্নয়নের ছাড়পত্র এবং সরকারের প্রচলিত আইন ও নীতি অনুযায়ী অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতরের অনাপত্তিপত্র পাওয়া গেছে।
এ ছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্য এলাকাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে স্থায়ীভাবে কলাবাগান থানা স্থাপনের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার দিয়েছেন।
ফারুক হোসেন জানান, ঢাকার জেলা প্রশাসক সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে ওই জমি অধিগ্রহণের জন্য সুপারিশসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের মতামত দেন এবং সরকারের কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটিতে কলাবাগান থানার জন্য ওই জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর গত ৩১ জানুয়ারি ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ডিএমপিকে তেঁতুলতলা মাঠের জমির দখলভার হস্তান্তর করে।
এদিকে ডিএমপির পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে পুরো জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার ১৩টি ধাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়। প্রথমে কলাবাগান থানার জন্য দশমিক ২০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন মেলে। সরকারি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে রাজউকের কোনো আপত্তি নেই মর্মে ছাড়পত্র পাওয়া যায়।
এরপর জায়গাটির প্রস্তাবিত ভূমি ব্যবহার আরবান রেসিডেনসিয়াল জোন (নগর আবাসিক এলাকা) হিসেবে চিহ্নিত আছে মর্মে নগর উন্নয়নের ছাড়পত্রের পর পরিবেশ অধিদফতরের অনাপত্তিপত্র নিয়েছে ডিএমপি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য ওই জমিতে এলাকাবাসীর নিরাপত্তার সুবিধার্থে স্থায়ীভাবে কলাবাগান থানা স্থাপনের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর ডিও লেটার দেন।
ঢাকা জেলা প্রশাসক সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে ওই জমি অধিগ্রহণের জন্য সুপারিশসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের মতামত পাঠানোর পরেই সরকারের কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটিতে কলাবাগান থানার জন্য দশমিক ২০ একর জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়।
ডিএমপি জানিয়েছে, জেলা প্রশাসক জমির ক্ষতিপূরণ মূল্য বাবদ ডিএমপি কমিশনার ঢাকা ২৭ কোটি ৫৪ লাখ ৪১ হাজার ৭১০ টাকার প্রাক্কলন করেন, এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ব্যয় মঞ্জুরি পাওয়ার পর চেকের মাধ্যমে সেই টাকা পরিশোধ করা হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন