বিএনপি থেকে হঠাৎ পদত্যাগ করলেন সাবেক দুই সেনা কর্মকর্তা

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল অব. মো. শাহজাহান মিয়া ও বর্তমান নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর অব. হানিফ দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।

সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে সশরীরে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

দলের মহাসচিব বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্রে কর্নেল অব. মো. শাহাজাহান লেখেন, ‘আমি মো. শাহজাহান মিয়া বিএনপির ২০১৬ সালের কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। আমি ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। স্বাস্থ্যগত কারণে আমি ২৮ জুন বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’

‘বিএনপির বর্তমান কমিটির নির্বাহী সদস্য মেজর অব. হানিফও একই বক্তব্য জানিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।’

এ বিষয়ে মেজর অব. হানিফ জানান, ‘ব্যক্তিগত কারণে পদ ছেড়ে দিয়েছি। বয়স হয়েছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে পদত্যাগ করেছি। আমি এবং কর্নেল (অব.) শাহজাহান একইসঙ্গে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে আমাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে রিসিভ করিয়ে এনেছি।’

দল থেকে পদত্যাগ করলেন নাকি রাজনীতি থেকে অবসরে গেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছি।’

দলের ঊর্ধ্বতন নেতারা ডাকলে ফিরবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, ‘আমি অতি ক্ষুদ্র মানুষ। আমাকে ডাকবে না। সোমবার সকালে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি, ডাকলে এতক্ষণে ডাকতো।’

অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের যাবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের যাব না।’

এই দুই নেতার পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন।

এদিকে, হঠাৎ দুই নেতার পদত্যাগে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে। কেন তারা পদত্যাগ করেছেন সেই প্রশ্ন এখন দলের নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। পদত্যাগপত্রে কারণ হিসেবে তারা ব্যক্তিগত এবং শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করলেও তা বিশ্বাস করছেন না কেউ।

তাদের ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানান, ‘তাদের পদত্যাগের অন্য কারণ আছে। নতুন মিশন আছে।’

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্যগত কারণ দেখানো হলেও শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিরোধ ও অবমূল্যায়িত হওয়ার কারণেই এই দুই নেতা দল ছাড়েন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ ছাড়া বিএনপি জোট থেকে নতুন একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম তৈরির যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, এই দুই নেতা সেই প্ল্যাটফরমে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। ওই প্ল্যাটফরমে বিএনপি জোট সমর্থিত অন্তত দশজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, সাবেক আমলাসহ রাজনীতিবিদ রয়েছেন।

এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খানসহ কয়েকজন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন।

কর্নেল শাহজাহান গণমাধ্যমের কাছে তার পদত্যাগপত্রের অনুলিপি পাঠিয়েছেন। মহাসচিবকে লেখা ওই পত্রে তিনি বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যগত কারণে প্রাথমিক সদস্য পদসহ বিএনপির সব প্রকার পদ থেকে পদত্যাগ করিলাম।’

আরেক পদত্যাগী নেতা মেজর (অব.) হানিফ জানান, ‘সোমবার কর্নেল শাহজাহানকে নিয়ে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।’
ব্যক্তিগত এবং অসুস্থতার কারণে তারা দল থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

দুই নেতার পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ্ প্রিন্স বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমার কাছে কোনো পদত্যাগপত্র উপস্থাপিত হয়নি।’

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন কর্নেল শাহজাহান।
সিরাজগঞ্জের রহমতগঞ্জের বিএনপির নেতা হানিফ। গত বছর করোনা রোগীদের জন্য নিজের বাড়িকে আইসোলেশন সেন্টার করার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।