বিদ্যুতের আলোর ঝলকানিতে আলোকিত হবার অপেক্ষায় পাবনার চরাঞ্চলের গ্রাম


এবার আলোর ঝলকানিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে তিন জেলার চরাঞ্চলের নয়টি ইউনিয়নের ৭০টি গ্রাম। চরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে মৌলিক অধিকারগুলো এখনো দুর্লভ। সেই চর এবার আলোকিত হয়ে ঘুচাবে অন্ধকার। মানুষের মৌলিক অধিকার ঘুচানোর পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করছেন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে পাবনা, মানিকগঞ্জ ও রাজবাড়ি জেলার চরাঞ্চলের নয়টি ইউনিয়নের ৭০টি গ্রামকে বিদ্যুতের আওতায় আনার কাজ চলছে দ্রæতগতিতে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন লাইন নির্মাণকাজ ও নদী ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে, যা চলতি বছর নভেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার আশা করছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
প্রকল্প সূত্র জানায়, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৮৫ কিলোমিটার অফগ্রিড বৈদ্যুতিক লাইন। প্রকল্পের মধ্যে সাবস্টেশন রয়েছে একটি (১০ এমভিএ)। সাবমেরিন ক্যাবল ৩৩ কেভি একটি ও ১১ কেভি তিনটি।
বিদ্যুতায়নের আওতায় রয়েছে পাবনা জেলার বেড়া উপজেলায় পাঁচটি, রাজবাড়ি জেলার সদর, গোয়ালন্দ, দৌলতদিয়া এবং মানিকগঞ্জ জেলার শবালয় উপজেলার একাংশ। নয়টি ইউনিয়ন হলো- নতুন ভারেঙ্গা, পুরান ভারেঙ্গা, হাটুরিয়া-নাকালিয়া, আরুয়া, মিজানপুর, শিবালয়, তেওতা, বাঘুটিয়া ও বাচামারা। ৭০টি গ্রামের ১১ হাজার ২৭৬ জন মানুষ এ বৈদ্যুতিক সেবার আওতায় আসবেন।
পাবনার কাশিনাথপুর ফায়ার সার্ভিসের পেছন থেকে মানিকগঞ্জের বাঘুটিয়া পর্যন্ত আপগ্রিড লাইন নির্মাণ করা হবে। এক বছর আগে শুরু হওয়া এ কাজ শেষ হবে নভেম্বরের মধ্যে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রিড থেকে মূল লাইন এসে যুক্ত হবে এই লাইনে।
সম্প্রতি পাবনার বেড়া উপজেলার কল্যাণপুর চরে নির্মাণকাজ পরিদর্শনে যান পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক, সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (কারিগরি) মনিরুল ইসলাম, এজিএম (সদস্য সেবা) আনোয়ার হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মেজবাহ উল হক, পুরান ভারেঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান এ এম রফিকুল্লাহ প্রমুখ।
ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (কারিগরি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু নদীতে ড্রেজিং চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের কাজ শেষ করা হবে এবং মুজিববর্ষের মধ্যেই চর আলোকিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) মাধ্যমে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এ কাজ বাস্তবায়ন করছে।’
এজিএম (সদস্য সেবা) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে মানুষ যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হয়, দালালের খপ্পরে না পড়েন, সেজন্য আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি। লিফলেট বিতরণ করেছি। পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় উঠান বৈঠক ও মাইকিং করেছি। সবাইকে বলে দেয়া হয়েছে অফিসের নির্ধারিত ফি ৪৫০ টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করার জন্য। এর বাইরে কাউকে কোনো টাকা না দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘শাহজাদপুর গ্রিড থেকে আমরা প্রায় ৩০ কিলোমিটার ৩৩ কেভি লাইন ইতোমধ্যে নির্মাণ করেছি। যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল যাবে ২ দশমিক ২ কিলোমিটার। এজন্য নদী খনন কাজ চলছে। খনন কাজ করছে বিআইডবিøউটিএ। খনন কাজ শেষ করে তার লিঙ্ক করা, সাবস্টেশন চালু করে চর এলাকার সোয়া ১১ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারবো। আশা করছি আগামী নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’
পাবনা-২ আসনের সাংসদ আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, ‘চরাঞ্চলের একটি বড় অংশ বিদ্যুৎ থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন দর্শন যে পিছিয়ে পড়া সব শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে নেওয়া, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে এই বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ একটি উন্নয়নমূলক কাজ। বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে পাবনা, মানিকগঞ্জ ও রাজবাড়ির চরাঞ্চলের মানুষের আর্থ সামাজিক জীবনমান উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন ঘটবে। বিশেষ করে কৃষি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। এতে উৎপাদন খরচ কমে চরের মানুষ উৎপাদনে উৎসাহী হবে।’

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন