বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বাড়ছে

নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বী দামের কারণে জীবনযাপনে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। এর মধ্যে গত ১২ জানুয়ারি ৫ শতাংশ বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সবার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিক অনটন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন বিশ্নেষকরা ।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, দুর্নীতি ও লুন্ঠনমূলক ব্যয় বৃদ্ধি করার কারণে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে৷ এখাত থেকে যদি দুর্নীতি ও লুন্ঠন কমানো যায় তাহলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবেনা৷

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ইউটিলিটি খরচ কমানোর জন্য আমরা বলেছি৷ কিন্তু সেটা তারা করছে না৷ তারা কোনো যুক্তিই মানতে চায় না৷ দাম বাড়ানোই হচ্ছে তাদের লক্ষ্য৷

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সামগ্রিকভাবে দেশকে আরো সংকটের দিকে নিয়ে যাবে। ১১ বছরে সরকার বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। গত তিন বছরেই দেওয়া হয়েছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এই স্বজনতোষী ব্যবস্থার বৈধতা দিতে সংসদের মাধ্যমে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে।

সরকারের গত ১৪ বছরের শাসনামলে খুচরা এবং পাইকারি উভয় পর্যায়ে ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অসহনীয় দামে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠছে। কিছু দিন আগে পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছিল বিদ্যুতের দাম। এতে শিল্পে উৎপাদন খরচ বেড়েছিলো। এখন ভোক্তাপর্যায়ে বাড়ানোর ফলে অতিরিক্ত খরচ সমন্বয় করতে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমবে।

প্রসঙ্গত, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা দাম পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ এর ধারা ৩৪ক-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিদ্যুতের খুচরা মূল্যহার এবং বিদ্যুৎ সম্পর্কিত বিবিধ সেবার জন্য চার্জ/ফি পুনঃনির্ধারণ করা হলো। নতুন মূল্য অনুযায়ী গ্রাহক পর্যায়ে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের জন্য আগের চেয়ে ইউনিট প্রতি ১৯ পয়সা বেড়েছে। আর সবেচেয়ে বেশি ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে বেড়েছে ৫৪ পয়সা।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৩ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩ টাকা ৯৪ পয়সা, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ১৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৪০ পয়সা, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৫ টাকা ৭২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ১ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩০ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৩৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬৬ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ৯ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১১ টাকা ৪৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৩ পয়সা করা হয়েছে।