আগামী মাসেই সার্ভেয়ার সার্কুলার; জমির ব্যবহারের ভিত্তিতেই করের হার
ভূমি সচিব অনলাইন লাইভে নাগরিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিলেন
ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ জানান আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা বিভাগে সার্ভেয়ার নিয়োগের সার্কুলার দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা (০৬:৩০) থেকে প্রায় সাড়ে সাতটা (০৭:৩০) পর্যন্ত ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ (www.facebook.com/minland.gov.bd) থেকে ‘মিট দ্যা সেক্রেটারি’ শীর্ষক এক ফেসবুক লাইভে অংশ নিয়ে ভিউয়ারদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। লাইভটির দর্শকরা কমেন্ট/চ্যাটের মাধ্যমে ভূমি সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন করেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুই হাজারের বেশি বিভিন্ন ধরণের ভূমি সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন করা হয়েছে লাইভে।
এসময় সচিব আরোও জানান, সার্ভেয়ারদের নিয়োগ নিয়ে জটিলতা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। খালেদ হাসান মণ্ডল নামের এক প্রশ্নকর্তার উত্তরে তিনি এই তথ্য জানান ফেসবুক লাইভে।
প্রসঙ্গত, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের দপ্তর বলতে কালেক্টরেট (ডিসি অফিস), উপজেলা ভূমি অফিস (এসিল্যান্ড অফিস) ইত্যাদি দপ্তর বোঝায়।
এর আগে প্রশ্নোত্তর পর্বের পূর্বে সচিব ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনার ব্যাপারে সংক্ষিপ্তভাবে লাইভ ভিউয়ারদের জানান। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব তথা দেশের শীর্ষ ভূমি কর্মকর্তা কর্তৃক প্রথমবারের মত নাগরিকের সাথে এমন উন্মুক্ত ফোরামে সরাসরি অংশগ্রহণ সরকারি নাগরিক সেবায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নাগরিক ভূমিসেবা আরও স্মার্ট করে মাল্টি-চ্যানেল ভিত্তিক নাগরিক সেবা (কাস্টমার সার্ভিস) প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। গতকালের অনুষ্ঠিত ফেসবুক লাইভ এসব বহুমুখী উদ্যোগের অন্যতম অংশ। পরবর্তীতে ভূমি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং দক্ষ ভূমি কর্মকর্তারা পর্যায়ক্রমে মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক থেকে নিয়মিত লাইভে অংশ নিয়ে নাগরিকদের ভূমি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর দিবেন।
লাইভে বিপুল সংখ্যক প্রশ্নের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মোহাম্মেদ বাবরের প্রশ্নের উত্তরে সচিব জানান, জমির ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ হয় জমির ব্যবহার ভিত্তিক শ্রেণির উপর। উদাহরণসরূপ তিনি বলেন, অন্যকোনো শ্রেণির জমির উপর আবাসিক বাড়ি তৈরি করলে, উক্ত ভূমির এলডি ট্যাক্স আবাসিক শ্রেণিতেই গ্রহণ করা হয়, কাগজেকলমে যে শ্রেণি আছে সেই অনুযায়ী নয়। জেলা প্রশাসকের কাছে এর ক্ষমতা দেওয়া আছে। সচিব সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে জানান, নামজারি করার ক্ষেত্রে দলিলের সনের উপর কোনো বিধিনিষেধ নাই। আগের যেকোনো তারিখে করা দলিলের ভিত্তিতে নামজারির আবেদন করা যাবে।
মোহাম্মদ রুহুল আমিনের সিএস মৌজা ম্যাপ গ্রহণ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, land.gov.bd পোর্টালে আবেদন করে কিংবা ১৬১২২ তে কল করে ডাকবিভাগের মাধ্যমে ঘরে বসেই মৌজা ম্যাপের স্ক্যান কপি পাওয়া যাবে। ম্যাপ সম্পর্কিত অপর এক প্রশ্নকর্তার জিজ্ঞাসার পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি সচিব জানান, ম্যাপ ডিজিটাইজেশনের কাজ চলছে। আগামী মার্চ মাসে ২০ হাজার ডিজিটাইজ মৌজা ম্যাপ অনলাইনে আপলোড করে দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সব ম্যাপ আপলোড করা হবে। তখন ফি এর বিনিময়ে এই ম্যাপ পাওয়া যাবে।
কুয়েত প্রবাসী মোঃ ফারুক ভূমি অফিসের কর্মরত ব্যক্তিকে টাকা দিয়েও খতিয়ান সংশোধনে ভূমি অফিসের হয়রানির কথা বললে সচিব জানান ভূমি অফিসের কোনো গণকর্মচারীর সঙ্গে কোনো ধরণের সেবার জন্য আর্থিক লেনদেন করা যাবেনা। অনলাইনে নিজে কিংবা নিকট আত্মীয়স্বজন (অথবা ডিজিটাল সার্ভিস প্রোভাইডারের) সাহায্যে আবেদন করে খুব সহজেই অনলাইনে খতিয়ান সংশোধন করার আবেদন করার যাবে। এসিল্যান্ড খুব দ্রুত সংশোধন করে দিবে। প্রয়োজনে ১৬১২২ তে কল করার পরামর্শ দেন ভূমি সচিব।
মোঃ নেওয়াজ শরীফের কর্তৃক করা কোনো খতিয়ানে ভাই-বোনের সম্পদ ভিত্তিক অসামঞ্জস্যতা সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, বোনদের বঞ্চিত করে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ তৈরির শাস্তি হিসেবে খসড়াকৃত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে এই বিল সংসদে আইন আকারে পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত এর প্রতিকার হচ্ছে এসিল্যান্ডের কাছে রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করা। ভুয়া ওয়ারিশ সনদের উপর হওয়া রেকর্ড সংশোধনের জন্য এসিল্যান্ডের কাছে প্রমাণ সহ আবেদন করলে এসিল্যান্ড তদন্ত করে তা সংশোধন করে দিবে। এই সময় ভূমি সচিব সবাইকে ওয়ারিশ সম্পত্তি হস্তান্তরের হিসাব করার জন্য ‘উত্তরাধিকার’ অ্যাপ এবং উত্তরাধিকার সনদের জন্য ‘প্রত্যয়ন’ অনলাইন সার্টিফিকেট সিস্টেম ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
পাপ্পু ইসলামের পাতা ছেঁড়া এসএ খতিয়ান সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে ভূমি সচিব জানান, মাস্টারকপি বিহীন হাতে লেখা এসএ খতিয়ানের বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে খতিয়ানের একটি কপি থাকে। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এসব খতিয়ান কপি করে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পেপার রিকনস্ট্রাকশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কপি করে সবার জন্য উন্মুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে শীগগিরই।
সৌদি প্রবাসী মোঃ কামরুল ইসলাম এনআইডি এবং দলিলাদিতে থাকা নামে পার্থক্য থাকায় ওয়ারিশদের মধ্যে জমি বণ্টনের সমস্যার কথা জানতে চান। এ বিষয়ে সচিব বলেন, এনআইডির সঙ্গে যদি নামের কিছুটা ব্যতিক্রম থাকে বা ভুল থাকে এমন ক্ষেত্রে করণিক ভুল সংশোধন সংশ্লিষ্ট ২৯শে জুলাই ২০২১ সালে জারিকরা পরিপত্রে বিষয়টি গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে। সচিব আরও জানান, কাগজপত্র ঠিক থাকলে নামপত্তনের জন্য সব ওয়ারিশদের ভূমি অফিসে আসার প্রয়োজন নাই। ওয়ারিশ কায়েম সনদ নিয়ে অনলাইনে ই-নামজারির আবেদন করলেই নামপত্তনের জন্য যথেষ্ট থাকবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন