মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে হাতিয়া দ্বীপ রক্ষার্থে ব্লকবাধেঁর জন্য খোলা চিঠি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আসসালামু আলাইকুম,
শুরুতেই দ্বীপ জনপদ হাতিয়া সাগর সংগ্রামী মানুষের পক্ষ থেকে রইল লাল গোলাপ শুভেচ্ছা। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত আর বাংলাদেশের প্রাচীন পরগনা খ্যাত দ্বীপ জনপদ হাতিয়া । অতি প্রাচীন কাল থেকে বাংলাদেশের যে কয়টি অঞ্চল কৃষি, শষ্য, মৎস ও দেশীয় সম্পদে সমৃদ্ধ ছিল তার মধ্যে হাতিয়া অন্যতম। এক সময় এখানকার শষ্য আর মৎস সম্পদ বাংলাদেশের দক্ষিন পূর্বাঞ্চল তথা পুরো চট্রগ্রাম, নোয়াখালী , লক্ষ্মীপুর, বরিশাল ও ঢাকা এসব অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রচুর ভূমিকা রাখে। কিন্তু এক সময়কার প্রায় ১১০০ বর্গ মাইলের হাতিয়া বর্তমানে প্রমত্তা মেঘনার করাল গ্রাসে সংকুচিত হয়ে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ৮০০ বর্গ মাইলের একটি জনপদে পরিনত হয়েছে। কয়েক দশক আগেও হাতিয়াতে ১১টি ইউনিয়ন ছিল। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন তা ৭ টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিম, উত্তর,পূর্বে রাক্ষসী মেঘনা,আর দক্ষিনে উত্তাল বঙ্গোপসাগর । আর পূর্ব,পশ্চিম,উত্তরে নদী ভাঙ্গনের করুন আর্তচিৎকারে ভারী হচ্ছে হাতিয়া দ্বীপের আকাশ বাতাস। প্রকৃতির নিরন্তর ভাঙ্গা গড়ার এক বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে হাজার বছরের প্রাচীন এই জনপদের মানুষ প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছে নিজের পিতৃ বসত ভিটা আর জন্মভূমির কোলে বসবাস করার জন্য । হয়ত এই প্রচেষ্টায় কেউবা টিকে থাকছে আবার কেউবা সমুদ্রের ভাঙ্গনের খেলায় পরাজিত হয়ে চলে যাচ্ছে নতুন কোন আবাসনের খোঁজে। সেই সাথে হয়তো তাদের মন থেকেও চলে যাচ্ছে নিজের প্রাণের ভূমি হাতিয়া দ্বীপের প্রতি মায়া মমতা। আজ এই বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়ে এই দ্বীপ জনপদের একজন গর্বিত অধিবাসী হিসেবে নিজের কাছে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন জাগে যে বিধাতার কি নিয়তি খেলা যেখানে বাংলাদেশের যেকোন অঞ্চলের মানুষ ইচ্ছে করলে যে কোন প্রয়োজনে যেকোন সময় তার নাড়ীর টানে ফিরতে পারে তার মাতৃভূমিতে, কিন্তু সাগর বেষ্টিত এই হাতিয়া দ্বীপের মানুষ ইচ্ছে করলে যে কোন সময় আসা যাওয়া করতে পারে না তার মাতৃভূমিতে। তার একমাত্রই কারন যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম অন্ধকারচ্ছন্ন যুগে বাস করছে এই অঞ্চলের মানুষ। নির্দিষ্ট সময়ে কিছূ কাঠের ট্রলার আর নোয়াখালী চেয়ারম্যান ঘাট থেকে পাকিস্তান আমলের দুই একটি সি-ট্রাক সার্ভিস দিয়ে যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বনটুকু নিয়ে আসা যাওয়া করছে হতভাগা মানুষগুলো। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে সমুদ্র যখন উত্তাল থাকে সাগরের গর্জন শুনে ভয়ংকর এক পরিবেশের মধ্যে দিয়ে বিধাতার নিয়তিকে মেনে নিয়ে এক বুক সাহস নিয়ে এই সাগর পাড়ি দেয় এই অঞ্চলের সংগ্রামী মানুষগুলো । যাদের মনের ভিতর থাকে এক কল্পনার উত্তাল সাগর, প্রতিনিয়ত সেই সাগর পাড়ি দেয় প্রচন্ড সাহসী এই মানুষ গুলো। এই গেল নিয়তির কথা। আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে সারা বাংলাদেশ যখন ডিজিটাল উন্নয়নে ভাসছে সেই সাথে পিছিয়ে নেই এই হাতিয়া দ্বীপের মানুষ। শিক্ষা দীক্ষায় জ্ঞান বিজ্ঞানে সর্বক্ষেত্রে বিচরণ রয়েছে হাতিয়া দ্বীপের মানুষের।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি হয়ত জানেন বাংলাদেশের দক্ষিন পূর্বাঞ্চলের দ্বীপ হাতিয়ার মানুষগুলো তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে খুব বেশী নেতা দেখার সুযোগ হয়নি। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন অথবা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দুই একজন রাজনৈতিক নেতার পদ ধুলি পড়েছিল হাতিয়া দ্বীপে । তাও আবার হয়তো দেখার সুযোগ হয়নি অনেক বর্তমান প্রজন্মের। সুদীর্ঘকাল থেকে গড়ে উঠা হাতিয়াবাসীর প্রানের দাবি নদী ভাংঙ্গন রোধ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি হয়তো জানেন, এই হাতিয়া দ্বীপ একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এলাকা এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবি এই অঞ্চলটিকে ব্লক বাধেঁর মাধ্যমে যেন মেঘনারস্রোত ধারার ধকল আর রাক্ষসী মেঘনার কবল থেকে যেন রেহাই পায় এই অঞ্চলের সংগ্রামী মানুষগুলো। আর তার জন্য একটি বিশাল সুযোগ রয়েছে এই এলাকার। সেটি হল ব্লক বাধঁ । যেটির মাধ্যমে একদিকে সুযোগ হবে বিশাল ভূমিকে সাগরের বুক থেকে জাগিয়ে তোলা আর অন্য দিকে ভয়াল মেঘনার হাত থেকে এই অঞ্চলকে রক্ষা করা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি হয়ত জানেন সভ্যতার প্রারম্ভ থেকে মানুষ তার নিজের বসবাসের জায়গা করার জন্য পাহাড় বন জঙ্গল কেটে উদ্ধার করেছে ভূমি। আর তাতে প্রচুর পরিমানে অপচয় হচ্ছে আমাদের সবুজ বৃক্ষ আর প্রাকৃতিক ভারসাম্য। কিন্তু অতি সুখের বিষয় হল সাগরের তলিয়ে যাওয়া ভূমিগুলোকে উদ্ধার করে বাংলাদেশের আয়তন ও সম্ভাবনাকে জাগ্রত করার দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে এখানে বসবাস করছে প্রায় সাত লক্ষ মানুষ। যাদের অধিকাংশ জড়িত কৃষিকাজ, মৎস চাষ, আর নানা ধরনের উৎপাদনমুখী কাজে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অনেক সরকার আসল আর গেল কিন্তু এই নদী ভাংঙ্গন রোধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হতাশ হয়েছে বুক বাধা মানুষগুলো। নিজেদের হতাশার কথা যে কাউকে জানাবে হয়ত এমন কাউকে খুঁজে পায়নি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ভেবে বসে আছে নতুন কোন আশায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সম্প্রতি আপনি নাকি জলবায়ু ফান্ড থেকে প্রাপ্ত বেশ কিছু অর্থ দিয়ে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে সন্দ্বীপের একটি অংশ উডিরচর পর্যন্ত একটি ক্রসড্যাম নির্মাণের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । কিন্তু অতি দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে যে যেখানে নোয়াখালী থেকে উড়িরচরের মতো একটি ছোট ইউনিয়নকে সংযুক্ত করতে এতো বড় একটি প্রকল্প নেওয়া যায় সেখানে হাতিয়ার মতো এমন একটি জনবহুল উৎপাদনমুখী অঞ্চলকে কেন নদী ভাংঙ্গন রোধে বিবেচনা আনা হচ্ছেনা ? নানানরকম অজুহাত দিয়ে প্রত্যেকটি সরকার হাতিয়ার দ্বীপের মানুষের স্বপ্নটিকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ছোট বেলায় পড়েছিলাম “ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকনা বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল” ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালিও একদিন মানব সভ্যতার বিকাশের জন্য এই বিশাল জলরাশির মাঝে জেগে তুলেছে বিশাল বিশাল দ্বীপ রাষ্ট্র। হয়তো প্রাকৃতিকভাবে সাগরের বিন্দু বিন্দু বালি দিয়ে সভ্যতার অনেক বয়স কাটিয়ে হাতিয়া দ্বীপের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নকে গড়তে হবে যদি না এই হাতিয়া দ্বীপের মানুষ তাদের প্রানের দাবিটি বাস্তবে দেখতে না পারে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে হাতিয়া দ্বীপের হতভাগা জনগণের পক্ষ থেকে আকুল আবেদন নিজ জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে বেগবান মানুষ গুলোকে প্রকৃতির সাথে নিরন্তর যুদ্ধ করে বাঁচার অবলম্বন একটি ব্লক বাধঁ যেন নির্মান করা হয়। হয়ত এই অবদান টুকুর জন্য হাতিয়া দ্বীপের মানুষ আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে।
হাতিয়াবাসীর পক্ষে
ডা. আব্দুল মন্নান আপন
পূর্ব মাইজচরা, ৮নং সোনাদিয়া, হাতিয়া, নোয়াখালী
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন