ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার পথ খুলে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
যুদ্ধ চলছে চলুক, কিন্তু এখনও আলোচনার পথ খোলা আছে। রাশিয়াকে এমন ইঙ্গিত দিতে ইউক্রেনকে অনুরোধ জানিয়েছে মার্কিন কর্মকর্তারা। সিএনএন জানিয়েছে, একাধিক উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা এ নিয়ে কিয়েভের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
তারা চায়, কিয়েভ রাশিয়াকে বুঝাক যে এখনও কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোলা আছে। কারণ, দিনের পর দিন এভাবে যুদ্ধ চলতে থাকলে জনগণের সমর্থন ক্রমশ হ্রাস পেতে পারে।
এক সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, এর মানে এই না যে যুক্তরাষ্ট্র এখনই ইউক্রেনকে আলোচনায় বসতে বলছে। বরঞ্চ রাশিয়াকে শুধু জানিয়ে রাখা প্রয়োজন যে, চাইলে এখনও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোলা আছে। এর আগে গত অক্টোবর মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি একটি ডিক্রি জারি করেন। এর ফলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যে কোনো ধরণের আলোচনা নিষিদ্ধ করেন তিনি। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখন ইউক্রেনকে এমন কঠিন অবস্থা থেকে সরে যেতে অনুরোধ জানিয়েছে।
গত মাসে জেলেনস্কি বলেন, আমরা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত, তবে সেটি পুতিন নয় অন্য কোনো প্রেসিডেন্টের অধীনে। এখন যুক্তরাষ্ট্র চায় ইউক্রেন তার ‘পুতিন ক্ষমতাচ্যুত না হলে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়’ নীতি থেকে সরে আসুক।
তবে একইসঙ্গে জোর করে ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে বসানোর কোনো উদ্দেশ্য নেই যুক্তরাষ্ট্রের। মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলছে, কিয়েভের সরকার যেন অন্যান্য দেশের সমর্থন ধরে রাখতে পারে, তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা এটি। কিন্তু এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এমন অনুরোধ ইউক্রেনে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান ক্রমশ জটিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইউক্রেনের মতো মার্কিন কর্তৃপক্ষও মনে করে, পুতিন আলোচনার বিষয়ে আগ্রহী নন। তবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি’র পুতিনের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করার ঘোষণায় ইউরোপ, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলেও স্বীকার করে নিয়েছে মার্কিনীরা। যুদ্ধের কারণে এসব দেশকে খাবার ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে ভুগতে হচ্ছে।
যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রেও ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন কমে এসেছে। দেশটিতে এখন মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। এতে যদি রিপাবলিকান পার্টি কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে তবে ইউক্রেনকে অর্থ দেয়া বন্ধ করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার কিয়েভে এক সফরে হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে দ্বিধাবিভক্তি থাকলেও দেশটি ইউক্রেনের ন্যায়সম্মত ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য সমর্থন দিয়ে যাবে।
রাশিয়ার দখল করা ভূমির অনেক অংশ ইউক্রেন পুনরায় নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসার পর এ যুদ্ধের সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আবারও আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনের প্রতি ইঞ্চি ভূমির জন্য লড়বেন বলে শপথ করেছেন জেলেনস্কি। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়গুলোতে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করেছে দেশটি।
যদিও শান্তি চুক্তির একমাত্র উপায় হিসেবে ইউক্রেনকে রুশ ভাষাভাষী অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে অনেক বিদেশী শক্তি। যদিও এতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে ইউক্রেন। দেশটি বলছে, রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা হলে তা হবে শয়তানের সঙ্গে চুক্তি। গত মাসে দুই যুদ্ধরত দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনায় সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু জেলেনস্কি সে প্রস্তাব তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। তবে এসব কিছুর পরেও মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, এক সময় সমঝোতাতেই রাজি হবেন জেলেনস্কি। তাদের বিশ্বাস, শীতের আগে কিয়েভ চাচ্ছে যতটা সম্ভব সামরিক সাফল্য লাভ করতে। ইউরোপে শীত নেমে এলে হয়তো কূটনৈতিক সমাধানের দ্বার খুলবে।
রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা ইস্যুতে সুলিভান গত সপ্তাহে কিয়েভ সফরের সময় জেলেনস্কির সাথে সরাসরি আলোচনা করেন। তিনি জেলেনস্কির কাছে এ নিয়ে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ইউক্রেন যেভাবে আলোচনা নিষিদ্ধ করেছে তাতে পরে ক্রেমলিন দাবি করতে পারবে যে, ইউক্রেনের কারণেই শান্তি আলোচনা সম্ভব হয়নি।
সোমবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন যে, রাশিয়া ইউক্রেনের সাথে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা এমন সুযোগ দেখতে পাচ্ছি না, কারণ কিয়েভ বিষয়টিকে একটি আইনে পরিণত করেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন