রংপুরের পীরগঞ্জে হিজড়া’দের দুর্দিন! সমাজে অবদান রাখতে পারে তারাও
হিজড়া! অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ‘হিজড়া’ (তৃতীয় লিঙ্গ) অন্যতম। একই দেহে স্ত্রী এবং পুং চিহ্নযুক্ত (উভয়লিঙ্গ) মানুষকে হিজড়া বলে। যারা শারীরিকভাবে পুরুষ কিন্তু মানসিকভাবে নারী বৈশিষ্ঠের অধিকারী। তারা বংশ বিস্তারে অক্ষম। নেই কোন নিদিষ্ট সংসার কিংবা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও।
‘হিজড়া’ কারো কাছে আতঙ্কের, কারো কাছে ঠাট্রার এবং কারো কাছে কৌতুহলের বস্তু। সভ্যসমাজ থেকে একপ্রকার বিচ্ছন্ন, স্বেচ্ছায় নির্বাসিত এই শ্রেণীটি বিকৃত মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠে। সভ্যতার জীবন ধারায় এই সকল যৌন প্রতিবন্ধীরা সবসময়ই হয়ে এসেছে উপেক্ষিত। আমাদের সভ্যসমাজে হিজড়ারা অবজ্ঞার পাত্র। তাদের অঙ্গভঙ্গি, কথাবার্তা ভাংগা কন্ঠস্বর এবং অদ্ভুত রকম তালি বাজানোর সবকিছুই যেন ভিন্নরকম ও বিনোদনের খোরাক। দুঃখের বিষয় আজও তারা আমাদের কাছে বিনোদন মাত্রই।
তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষগুলো আর দশজনের মতো স্বাভাবিক জীবিকা নির্বাহ করেনা। মেয়েদের সাজে সজ্জিত হয়ে জীবিকার তাগিদে তারা জোটবদ্ধ হয়ে রাস্তার যাত্রীবাহী বাসে উঠে মানুষের কাছে হাতপাতে। দোকানে দোকানে ঘুরে টাকা তোলে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নাচ গান করে। এ সবই যেন তাদের জীবন। পীরগঞ্জ উপজেলার খালাশপীর হাটে গড়ে উঠেছে ‘হিজড়া’ সংগঠন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রায় ১৪০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ একত্রিত হয়ে তারা বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছেন। তাদের দলীয় নেতা সাইফুল ইসলাম ওরফে স্মৃতি।
শুক্রবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় সাইফুল ইসলাম ওরফে স্মৃতি’র সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা তো হিজড়া হয়ে জন্ম নিতে চাইনি, বিধাতার খেয়ালেই আমাদের এ পরিণতি। আমরাও আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো খেয়ে-পরে বাঁচতে চাই। হিজড়া শব্দকে তারা অভিশাপ বা গালি হিসেবে মনে করেন। স্মৃতি জানায়, বর্তমান করোনাকালীন সময়ে তারা অনাহারে- অর্ধাহারে কঠিন দুঃসময় পার করছেন। রাস্তায় যাত্রীবাহী বাস নেই, হাট-বাজারে অধিকাংশ দোকান-পাট বন্ধ, গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানও নেই। ফলে জীবন বাঁচানোর তাগিদে আমাদের ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হয়েছে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে যেটুকু পাই তা দিয়েই অতিকষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছি। সরকারী কোন সাহায্য সহযোগীতা আমাদের ভাগ্যে জোটেনা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের পীরগঞ্জের পুত্রবধু আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রংপুর-২৪, পীরগঞ্জ-৬ আসনের সাংসদ মাননীয় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী থাকা সত্বেও আমরা রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমরা কি এদেশের মানুষ নই?
আমাদের দেশে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সরকারী বে-সরকারী আন্দোলন বা পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর হলেও হিজড়াদের (লিঙ্গ প্রতিবন্ধী) কল্যাণে তেমন কোন কর্মসূচী চোখে পড়েনা। অথচ মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এসব হিজড়াদের সামাজিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে পারলে তারাও সমাজে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখতে পারে। তার দৃষ্টান্তও কম নয়।
গত ৮ই মার্চ’২১ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বে-সরকারী চ্যানেল বৈশাখী টেলিভিন- এ সংবাদ পাঠিকার ভূমিকায় তাসনুভা আনান শিশির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজে করোনা রোগীদের পাশে নিজের জীবন বাজি রেখে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বৃহন্নলা’র স্বেচ্ছাসেবক মুনমুন, রুহী, চাঁদনী। তারা প্রত্যেকেই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। করোনা আক্রান্ত রোগীকে যেখানে আপনজনেরা বয়কট করে, সেখানে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া মানুষগুলোর পাশে পরম যত্নে রোগীর হাত ধরে মনোবল যোগাচ্ছেন এসব হিজড়া। রোগীদের সাথে থেকে এগিয়ে দিচ্ছেন খাবার ও ঔষধপত্র। কতটাই না মানবিক!
দেশে লিঙ্গ প্রতিবন্ধীদের জন্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদেরকে সমাজের মুলধারায় অন্তভ‚ক্ত করলে তারাও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবেন বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন