রংপুরে সহকারী শিক্ষকের নাক ফাটালেন প্রধান শিক্ষক
রংপুরের মিঠাপুকুরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চলাকালে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকের মধ্যে হাতাহাতির একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক ঘুষি মেরে সহকারী শিক্ষকের নাক ফাটিয়েছেন।
ঘটনার পরপরই অভিভাবক সহ স্থানীয়রা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে আটক করে বিচার দাবি করে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে তুমুল হট্টগোলের পর স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের বাতাসন হযরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। আহত ওই শিক্ষককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষকের অভিযোগ- মিঠাপুকুর উপজেলাধীন ০৭ নং লতিবপুর ইউনিয়নস্থ বাতাসন হযরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তিনি। আজ (রবিবার) তিনি শ্রেণীকক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্লাশ শেষ করে বিদ্যালয়ের সভাপতির সঙ্গে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোর উন্নয়ন সম্পর্কে কথা বলছিলেন।
সে সময় তিনি বিদ্যালয়টির খোলা ল্যাপটিনের ঢাকনা দেখিয়ে বলছিলেন, এই ঢাকনা না থাকায় মল-মুত্রের গন্ধ আসছে। প্রধান শিক্ষক বাবু স্কুল সংস্কারের না করে বরাদ্দের টাকা আত্মসাত করায় বিদ্যালয়ের টয়লেট সহ বাথরুমের এমন দূর্দশা।
বিদ্যালয়টির সভাপতি প্রধান শিক্ষক বাবুর বড় বোন লুৎফুন নাহার রত্না (বাবুর) নিকট গিয়ে, সহকারী শিক্ষকের অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক- তারিকুজ্জামান বাবুকে জিজ্ঞেস করায়, বাবু উত্তেজিত হয়ে সহকারী শিক্ষক হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ক্লাস না নেওয়ার অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক বাবু এবং সহকারী শিক্ষক হারুনুর রশিদের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতন্ডা দেখে সভাপতি তাদের শান্ত করে চলে যান। সভাপতি লুৎফুন নাহার রত্না চলে যাওয়ার পরই প্রধান শিক্ষক বাবু সহকারী শিক্ষক হারুনুর রশিদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং সহকারী ওই শিক্ষকের নাকে আকস্মিক ঘুসি মারেন। এতে তার নাক ফেটে গিয়ে রক্ত বের হয়।
অভিভাবক ও স্থানীয়দের অভিযোগ- প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম আর স্বজন প্রীতির কারনে বিদ্যালয়ে সেরকম পাঠদান হয় না। বিদ্যালয়টির সভাপতি প্রধান শিক্ষকের নিজের বোন হওয়ায় প্রধান শিক্ষক বাবু নিজের ইচ্ছা মতো বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেন।
সরকারি বরাদ্দ পাওয়ার পরেও বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক-কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ে বরাদ্দের ফ্যান,পানির ট্যাংক,পাইপ বাসায় নিয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক তার বাসায় ব্যবহার করছেন।
রায়হান কবির নামে একজন জানান, প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি বিদ্যালয়টিতে ভুয়া অফিস সহায়ক নিয়োগ (পদের) জন্য মোসরেকুল ইসলাম নামে একজনের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ভুক্তভোগী মোসরেকুল টাকা ফেরত চাইলে প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি দুই ভাইবোন মিলে নানা রকম ভয়ভীতি দেখান। এমনকি বিদ্যালয়ের সকল বরাদ্দের টাকা আত্মসাত করেছেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তারিকুজ্জামান বাবু তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক হারুনুর রশিদ, নিয়মিত ক্লাস নেয়না। ঘনঘন ছুটির জন্য আবেদন করে। বাকবিতন্ডা থেকে একটু সমস্যা হয়েছে। তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে বাতাসন হযরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি, লুৎফুন নাহার রত্না জানান, বিষয়টি ভুলবোঝাবুঝি থেকে হয়েছে। আলোচনা করে সমাধান করা হবে।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, আকতারুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি শুনেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন