‘সরকার হঠানোর নিরাপদ সড়ক খুঁজছে বিএনপি’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে বিএনপি ও তার সাম্প্রদায়িক দোসররা সরকার হঠানোর নিরাপদ সড়ক খুঁজছে। এ নিয়ে আমরা একটু উদ্বিগ্ন, বিচলিত। শুক্রবার দুপুরে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভর করে ব্যর্থ হয়েছে। তারা নয় বছরের নয় মিনিটও রাস্তায় বিক্ষোভ করতে পারেনি। সেই দগদগে ব্যর্থতার পরে তার দোসররা কোটা আন্দোলনে ভর করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এখন তারা সোয়ার হয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনে। তার সাইন অ্যান্ড সিম্পটম আমরা বিগত ৫ দিন ধরে লক্ষ্য করছি।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক, সরকার স্বীকার করেছে। কিন্তু, এ যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক পথে উস্কানি দিয়ে ভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের অশুভ চক্রান্ত লক্ষ্য করছি। আমরা এও লক্ষ্য করছি, এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মিছিলে ঢুকে কিভাবে অশ্লীল, বিশ্রী, অশালীন স্লোগানের উস্কানি দিচ্ছে একটি রাজনীতিক মতলবি মহল। তারা এই শিশুদের সমাবেশে খাবার পানি সরবরাহ করছে এবং উস্কানি দিচ্ছে আরও উত্তেজিত হওয়ার জন্য। আমরা লক্ষ্য করছি এই শিক্ষার্থীরা কিছু কিছু এলাকা থেকে এই কুচক্রি মহলদের বের করে দিয়েছে। এই মহলটি সন্ধ্যার পর বেশি তৎপর হয়। সন্ধ্যার পর এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রী-এমপি অনেকেই নাজেহাল হয়েছেন। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীরা তাদের নাজেহাল করেনি। অনুপ্রবেশ করে মতলবি মহল এই অপকর্ম করেছে। তারা পুলিশ, বিজিবি অফিসার ও ভদ্রলোককে অপমান-অপদস্ত করেছে। সন্ধ্যার পর রাতের অন্ধকারে কার্যকলাপ শুরু করেছে। আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শনের অনুরোধ করেছি। কোনো প্রকার উস্কানির ফাঁদে না পড়ে সে ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছি। শুধু তারা লক্ষ্য রাখবে কারা, কারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশ করছে। অনুপ্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে শিশুদের যৌক্তিক আন্দোলনকে জনগণের কাছে ভুল মেসেজ দিতে চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা দেখাচ্ছি। ৫ দিন অতিবাহিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে সরকার কিন্তু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেনি। প্রথম থেকেই এই পরিস্থিতি আমরা প্রো-একটিভ ছিলাম, এখনো প্রো-একটিভ আছি। শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি পাবলিক স্টেটমেন্ট করে আমরা মেনে নিয়েছি। তাদের এমন কোনো দাবি নেই যা, আমরা মানতে অপরাগতা প্রকাশ করছি।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঘটনার পর আশ্চর্য দ্রুততার সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে গ্রেফতার করেছে। একজনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। প্রত্যেকে এখন কাস্টডিতে আছেন। এই ঘটনা কীভাবে হয়েছে, তা গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়টি মনিটরিং করছেন। তার নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপড়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। কোনো দুর্ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেফতার করা একটি মূল বিষয়, সেটা আমরা করেছি। এখানে কোনো গাফলতি বা উদাসীনতা ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন— রমিজউদ্দিন স্কুলের পাশে একটা আন্ডারপাস নির্মাণের যে দাবি, সেটা পূরণের বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে। অবশ্য এর আগে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এর ডিজাইন করে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে একটা প্রস্তাব পাঠানোর। সেনাবাহিনী সে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সেনাবাহিনী এই আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ অচিরেই শুরু করবে।’

সড়ক পরিবহন আইনের বিষয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইন মন্ত্রণলয় আগামী সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সড়ক পরিবহন আইন উত্থাপন করবে এবং সেটি বিল আকারে পাস হবে। এরপরে এই সরকারের শেষ অধিবেশন সম্ভবত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে, সেখানে আইনটি পাস হবে।’

তিনি বলেন, ‘শিশুদের যৌক্তিক আন্দোলন যেন কোনোভাবে অযৌক্তিক দিকে না যায়, সেজন্য সবাই সচেতন থাকব, সতর্ক থাকব।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কাছে, শিক্ষকদের কাছে, অভিভাবকদের কাছে শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নের জন্য সহযোগিতা চাই। আমরা আশা করি, সহযোগিতা পাব।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘আগুনের ভয়ে, ভাংচুরের ভয়ে, মারপিটের ভয়ে অনেক যানবাহন রাস্তায় নামছে না। আমি নিজেই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিআরটিসির গাড়ি চালিয়েছিলাম। সে চালকররা এখন জীবনের আশঙ্কায় নিরাপত্তার ভয়ে গাড়ি চালাতে চান না। এই আন্দোলনে সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় কালো ছায়া নেমে এসেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ গাড়ির অভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদের প্রতিবাদী কণ্ঠকে সম্মান করে বলছি, তোমার আগামী দিনের ভবিষ্যত, আগামী দিনের নেতা। তোমদের কাছে অনুরোধ, তোমরা শান্ত হও। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে তোমাদের সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণের কাজে লাগাবে। উস্কানিতে অবশ্য তোমরা বিভ্রান্ত হবে না। ছাত্রছাত্রীর বক্তব্য শুনেছি। তাদের মধ্যে শুভবোধ আছে। এই শুভবোধ জাগ্রত হয়েছে। তা আমাদের কাজে লাগবে। প্লিজ সহযোগিতা করুন।’

এ সময় তিনি জানান, শোকের মাসে কেউ যেন চাঁদাবাজি করতে না পারে, সেজন্য আমাদের নেতৃবৃন্দকে মনিটরিং করতে বলেছি। সতর্ক থাকতে বলেছি। বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার যেন শৃঙ্খলভাবে প্রদর্শন করা হয়। আগস্ট মাসের ভাবগাম্ভীর্য যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।