সাকিবকে এক ম্যাচের পারফরম্যান্স দিয়ে বিচার করা অদূরদর্শিতা
দু হাত ভরে দিলে রাখে মাথার মুকুট করে,
একটুখানি খোঁচট খেলে ফেলে দেয় ছুঁড়ে।
ফুলের মতো শোভা ছড়ালে বুকে হবে স্হান,
যখন আবার চুপসে যাবে, সঙ্গী হবে শশ্মান।
আমার কবিতার প্রথম চার লাইনের ভাবার্থ অনেকটাই মিলে যায় সাকিব আল হাসানের সাথে।
সাকিব আল হাসানের প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি, পূর্ণতা, অপূর্ণতার হিসাব চুকালে দেখা যাবে অপূর্ণতার পৃষ্ঠাটা খুবই হালকা। তার পূর্ণতা পাওয়া গল্পগুলো যেখানে রাতের পর রাত লিখে শেষ করা যাবে না, সেখানে অপূর্ণতার পৃষ্ঠাটা নিমিষেই চোখ বুলিয়ে শেষ করা যায়। সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ারে যে গুটিকয়েক বার ব্যর্থতার ছাপ পাওয়া গেছে, ঠিক তখনই দেখা যায় অতি আবেগী কিছু ব্যক্তিবর্গ যারা সাকিবের সমালোচনায় ফেসবুক রঞ্জিত করে রেখেছে। সাকিবের অল্প কয়েকটা বাজে পারফরম্যান্স দিয়ে তাকে বিচার করার চেষ্টা করে।
শাঁক দিয়ে যেমন মাছ ঢাকা যায় না তদ্রূপ ২/১ ম্যাচের
ব্যর্থতার পরিসংখ্যান দিয়ে সাকিবের ভুরি ভুরি অর্জন, সফলতার কাব্যগুলো ঢাকা যাবেনা।
হ্যাঁ আমি বলছিনা কেউ ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে গেলে তাকে প্রশংসা করতে হবে। তার সমালোচনা করতে হবে তবে সেটা অবশ্যই গঠনমূলক সমালোচনা চায়। কিন্তু সমালোচনার নাম করে যদি ট্রল করা হয় সেটা কতটা প্রত্যাশিত???
মানব জীবন ব্যর্থতা এবং সফলতাকে ঘিরেই সাজানো হয়। ব্যর্থতা এবং সফলতা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, মানুষ মাত্রই ভুল।
মানুষ হিসেবে ভুল হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু সেই ভুলকে ঘিরে চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে দেওয়ার যে প্রবণতা সেটা কতটুকু যৌক্তিক? মানুষের জীবনটা ঠিক মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ এর মতো। উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই মানুষের জীবন অতিক্রান্ত হয়।
সাকিব আল হাসান এর আবির্ভাব হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে প্রায় এক যুগ। এই এক যুগে তিনি বাংলাদেশকে দুহাত ভরে অনেক কিছু দিয়েছেন। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে দলের প্রয়োজনে বহুবার বীর সেনানীর বেশে একাই দলকে বিজয়ের মুকুট পড়িয়েছেন। সাকিব ছয় বলে পাঁচ ছক্কা হজম করায় একদল লোক সাকিবকে নিয়ে সন্দিহান!
যোগ্যতা দিয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পরেও যারা সাকিবের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারা কি আদৌ ক্রিকেটকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পেরেছে??
জ্যাক ক্যালিস যখন ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে উপনীত হয়েছেন ঠিক তখনই সাকিব প্রথমবারের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের মুকুট পড়েন। তারপর থেকে কখনোই আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাকিবের মত এত দীর্ঘ সময় কতজন নিজেকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন! সাকিব ই একমাত্র অলরাউন্ডার যিনি তিন ফরমেটে একসঙ্গে শীর্ষস্থান অক্ষুণ্ন রেখেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে সাকিব আল হাসানের পারফরম্যান্স নিয়ে মোটেও বিচলিত নয়। তার উপর অগাধ আস্থা রয়েছে, এর পিছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে বটে। কারণ তিনি এমন খেলোয়ার যিনি বারবার আগের চেয়ে ভয়ঙ্কর রূপে ফিরে আসে। তাই সাময়িক পারফরম্যান্স দিয়ে কখনোই সাকিব আল হাসানকে বিবেচনা করা কোনো বুদ্ধিমান মানুষের কাজ নয়।
লেখকঃ
জুবায়েদ মোস্তফা
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন