সাগর-রুনি হত্যা: ৪৮ ঘণ্টার আশ্বাসে পেরিয়েছে ৮৭ হাজার ঘণ্টা
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের দশম বার্ষিকী শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি)।২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন। তখন বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সারোয়ার মেঘ।
হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন।
এ হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাব প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় সেটি জমা দেওয়ার তারিখ ৮৫ বার পিছিয়েছেন আদালত।
হত্যাকাণ্ডের পর সেসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তারা বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু এরইমধ্যে পেরিয়ে গেছে ৮৭ হাজার ঘণ্টারও বেশি সময়। এত সময়ে মামলার বিচারই শুরু করা যায়নি।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরেবাংলা নগর থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার হস্তান্তর করা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মামলায় আটজনকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, মিন্টু, কামরুল হাসান, বকুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদ কারাগারে। পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান নামে দুজন হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন।
মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর নয় বছর ১০ বছরে গড়ালেও র্যাব এখনো কোনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি আদালতে। পেছাতে পেছাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ৮৫ বার পেছাতে হয়েছে। এ কারণে মামলার বিচারকাজ কবে শুরু হবে, তা নিয়ে চিন্তিত সাগর-রুনির স্বজনরা।
সাগর সারওয়ারের মা সালেহা মুনির আক্ষেপ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলাটি কোনো প্রভাবশালী মহলের ইশারায় সিন্দুকবন্দি হয়ে আছে। হয়তোবা সিন্দুকের চাবিই হারিয়ে গেছে। তাই হত্যাকাণ্ডের দশ বছরেও এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা।’
মেয়ে ও জামাইয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার না দেখতে পারার আক্ষেপ নিয়েই গত ৫ জানুয়ারি সকালে মারা যান মা নুরুন নাহার মির্জা (৬৪)। সেই প্রসঙ্গ টেনে সালেহা মুনির বলেন, ‘রুনির মা কিছু দিন আগে মারা গেছেন। তিনি তার মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেননি। আমিও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যেতে পারবো কি না, তা নিয়ে সন্দিহান।’
মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, ‘বোনের হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যেতে পারেননি আমার মা। ১০ বছর ধরে এ হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। আর কত বছর লাগবে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে আল্লাহই ভালো জানেন।’
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্ত সংস্থার উচিত মামলাটি দ্রুত তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করা।’
মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মামলাটি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ। ঘটনার প্রায় দুই মাস পর তদন্তভার র্যাবের ওপর ন্যস্ত হয়। তদন্তভার পাওয়ার পর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে র্যাব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অপরাধের ধরন বিশ্লেষণ করেছি। ১৬০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নিয়েছি। আটজন আসামিকে গ্রেফতার করে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা আমাদের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেশের গণ্ডি অতিক্রম করে উন্নত দেশের সহায়তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ডিএনএ পরীক্ষা করেছি। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা আমাদের প্রচেষ্টা কোনো ঘাটতি রাখছি না। আদালতে মামলার অগ্রগতির বিষয়টি বিভিন্ন সময় অবহিত করছি।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন