‘অনুতপ্ত’ ‘আইএস বধূ’ শামীমা একবার সুযোগ চান

সিরিয়ায় গিয়ে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগম বলেছেন, তিনি নিজ দেশ যুক্তরাজ্যে ফেরার জন্য দ্বিতীয়বারের মতো একটি সুযোগ চান। আইএসের খেলাফতে যোগ দেওয়া, সেখানে বিয়ে ও সন্তান ধারণের জন্য তিনি ‘অনুতপ্ত’ও বলে মন্তব্য করেছেন।

সোমবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশে ফেরার আর্জি জানিয়েছেন ১৯ বছরের ব্রিটিশ এই তরুণী। তাঁর তৃতীয় ছেলেসন্তান মারা যাওয়ার পর গণমাধ্যমে এটাই তাঁর প্রথম সাক্ষাৎকার।

শামীমা বেগম বলেন, ‘বাঘুজ (সিরিয়ার আইএসের সবশেষ ঘাঁটি) ছেড়ে আসার পর আমি আমার আগের সবকিছুর জন্য খুবই অনুতপ্ত। আমি দ্বিতীয়বারের মতো একটা সুযোগ চাই, যাতে করে যুক্তরাজ্যে ফিরে নিজের জীবনটা আবার শুরু করতে পারি।’

‘আমাকে ব্রেইন ওয়াশ (মগজধোলাই) করা হয়েছিল। আমাকে যা বোঝানো হয়েছে, তা-ই বিশ্বাস করে আমি সিরিয়ায় চলে এসেছিলাম। অথচ আমি ইসলামের প্রকৃত মর্মার্থের কিছুই জানতাম না। আমি আইএস খেলাফতে সন্তান ধারণের ঘটনায় অনুতপ্ত।’

‘আমার মনে হয়েছিল, এটা হবে এমন এক জায়গা, যেখানে আমি নিরাপদে পরিবার লালন-পালন করতে পারব। কিন্তু এটা আসলে সন্তান গ্রহণের মতো কোনো জায়গা ছিল না।’

২০১৫ সালে নিজের দেশ ও পরিবার ছেড়ে যাওয়ার সময় নিজের বিষণ্ণতার কথাও বলেন শামীমা। অনলাইনে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত লোকজন তাঁকে দেশ ছাড়ার কথা বলে। তাঁর এমন সিদ্ধান্তের জন্য পরিবারের সঙ্গে খুব বাজে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন শামীমা। তিনি আরো বলেন, ফিরে যেতে পারলে হয়তো মা-বাবার সঙ্গে আবার নিজের সম্পর্ক জোড়া লাগাতে পারতেন।

পূর্ব লন্ডনে মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন শামীমা বেগম। পড়তেন বেথনাল গ্রিনের একটি স্কুলে। সেখান থেকে ২০১৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে আইএসে যোগ দিতে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় চলে যান তিনি। পরে সেখানে ডাচ বংশোদ্ভূত এক ‘জিহাদিকে’ বিয়ে করেন তিনি। এই দম্পতির প্রথম দুটি সন্তানও অপুষ্টিতে মারা যায়।

সিরিয়া যুদ্ধের শেষ প্রান্তে এসে শামীমার স্বামী আত্মসমর্পণ করেন। আর শামীমাকে সিরিয়ায় একটি শরণার্থী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই বিবিসির এক সাংবাদিক তাঁর দেখা পান। কিন্তু তখন তিনি ‘অনুতপ্ত’ ছিলেন না।

শামীমা সেখানেই আবারও এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। এই সন্তানের জন্যই ব্রিটেনে ফিরতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েক দিনের মাথায় শামীমার সেই সন্তানটি মারা যায়। আর শামীমার আবেদন নাকচ করে তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে যুক্তরাজ্য।

শামীমার যুক্তরাজ্যে ফেরার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে দেশটির স্বরাষ্ট্র সচিব সাজিদ জাভিদ জানিয়েছিলেন, মায়ের সূত্রে শামীমা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেতে পারে।

এর জবাবে বাংলাদেশ শামীমাকে নিজের নাগরিক হিসেবে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। শামীমার আইনজীবীও জানান, তাঁর দ্বৈত নাগরিকত্ব নেই।

টাইমসকে শামীমা জানান, যুক্তরাজ্য তাঁকে ফিরিয়ে না নিলে অনাগত ভবিষ্যতে তিনি সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরেই জীবন কাটাতে থাকবেন। এটিকেই তিনি নিজের ‘দ্বিতীয় জন্মভূমি’ করে তুলবেন।

এদিকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেও শামীমাকে ফেরত না নেওয়া ও তাঁর সন্তানের মৃত্যুর জন্য অনেকেই যুক্তরাজ্যের সমালোচনা করেন। শামীমার সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্যের আরো বেশি কিছু করা উচিত ছিল বলে মনে করেন তাঁরা।

যদিও এ ব্যাপারে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব জেরেমি হান্ট বলেন, যুদ্ধাবস্থা চলতে থাকা সিরিয়ায় শামীমার সন্তান উদ্ধারে নিজেদের কর্মকর্তা পাঠানো ছিল খুব বিপজ্জনক।