অস্ত্র বিক্রি বাড়াতে চীনের সামরিক মহড়া

বিশ্বের কয়েকটি দেশের অংশগ্রহণে একটি আন্তর্জাতিক সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছে চীন। রোববার থেকে দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশের করলায় শুরু হওয়া এ মহড়া চলবে ১১ আগস্ট পর্যন্ত। একই সঙ্গে উপকূলবর্তী ফুজিয়ান প্রদেশেও চলছে নৌবাহিনীর মহড়া। আর এ মহড়ার পেছনের উদ্দেশ্য হলো নিজেদের দ্রুত সম্প্রসারণশীল অস্ত্রের বাজার বৃদ্ধি।

সিএনএন ও গ্লোবাল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল আর্মি গেমস (আইএজি) নামের এ মহড়ায় অংশ নিচ্ছে চীন, বেলারুশ, মিসর, ইরান, কাজাখস্তান, রাশিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, উজবেকিস্তান, ভেনেজুয়েলা ও জিম্বাবুয়ে। আর্মেনিয়া আর ভারত পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছে। মহড়ায় অংশ নিচ্ছে মূলত চীনা ও রুশ অস্ত্রের ব্যবহারকারী। ব্যবহারকারী দেশগুলো কেনার আগে মহড়ায় বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে দেখার সুযোগ পাচ্ছে।

বিশ্বের শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশগুলোর একটি হতে চায় শক্তিধর চীন। বাড়াতে চায় প্রভাব-প্রতিপত্তি। এ জন্য দেশটি তাদের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি বাড়াতে বড় ধরনের আন্তর্জাতিক সামরিক প্রতিযোগিতাকে ব্যবহার করছে। অস্ত্র বিপণন ও বিজ্ঞাপনের জন্য দেশটি সামরিক মহড়ার পথ বেছে নিয়েছে।

চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিনজিয়াংয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক সামরিক মহড়ার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চীনের সামরিক সরঞ্জামের প্রদর্শনী হচ্ছে। ফুজিয়ানে পৃথক মহড়ার উদ্দেশ্যও সারা বিশ্বের সামরিক শক্তিকে সেখানে জড়ো করা।

যুক্তরাজ্যর দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বিশ্লেষক নিক মারো বলেন, এ মহড়া চীনের জন্য একটি বড় সুযোগ। এ মহড়া তাদের সেনাবাহিনীর বিশ্বে প্রবেশে সহায়তা করতে পারে। বিশ্বের কাছে নিজেদের সামরিক সক্ষমতা তুলে ধরার ফলে তারা বাণিজ্যিক সুবিধাও পাবে।

সুইডেনভিত্তিক সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, বিশ্বের অন্যতম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হলেও যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানির থেকে পিছিয়ে রয়েছে চীন। ২০০৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চীন বিদেশি সরকারের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ চীনের শীর্ষ সামরিক সরঞ্জাম ক্রেতা দেশগুলো এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। চীন থেকে অস্ত্র ক্রয়ের দিক দিয়ে ইরান ও মিয়ানমারও শীর্ষে রয়েছে।

পিপলস লিবারেশন আর্মির ওয়েবসাইটে এক নিবন্ধে চীনের সামরিক বিশেষজ্ঞ সং জংপিং বলেন, এ মহড়াগুলো ‘সামরিক পণ্যগুলোর জন্য বিপণন ও বিজ্ঞাপন প্রদর্শন’।

পিপলস লিবারেশন আর্মির মুখপাত্র কর্নেল লিয়াও ইয়ানলিং বলেন, চীন থেকে ৩৫৮ জনের দল অংশ নিচ্ছেন এ মহড়ায়।

পাকিস্তান এর পরে চীনে আরও একটি মহড়ায় অংশ নেবে। দেশটি চীনের কাছ থেকে অস্ত্র কেনা বাড়িয়েছে। জিনজিয়াংয়ে স্থল ও বিমান মহড়ায় অংশ নেবে পারমাণবিক শক্তিধর ও চীনের শীর্ষ অস্ত্র ক্রেতা দেশ পাকিস্তান। ক্ষেপণাস্ত্র, জেট ফাইটার বিমান কিনেছে দেশটি।

ভেনেজুয়েলা আগের বছরে জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে। ফুজিয়ানে চলমান নৌবাহিনীর মহড়াও অংশ নেবে নিকোলা মাদুরোর দেশ।

মহড়ার উদ্বোধনী দিনে রাশিয়া ও চীনের ট্যাংক দেখানো হয়। রকেট লাঞ্চার, হেলিকপ্টারও প্রদর্শন করা হয়।

প্রধান ক্রেতারা
চীনের সামরিক মহড়ার বিষয়ে দেশটির সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মির ওয়েবসাইটে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে চীনের সামরিক বিশেষজ্ঞ সং ঝংপিং বলেন, সামরিক শিল্পপণ্যের বাজারজাতকরণ ও বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য এসব মহড়া।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের চায়না পাওয়ার প্রজেক্টের প্রতিবেদনের মতে, চীনের বিক্রি করা সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের উপস্থিতি শনাক্ত ব্যবস্থা ও যৌথভাবে তৈরি করা জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান রয়েছে।

২০১৭ সালে চীন থেকে বেশ কিছু (প্রকাশ করা হয়নি) সি-৮০২ জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কেনে ভেনেজুয়েলা। দেশটি ফুজিয়ানের সামরিক নৌমহড়ায় অংশ নেবে।

এই রকম মহড়ার প্রধান আয়োজক রাশিয়া। তবে সহ-আয়োজক হিসেবে চীনের ভূমিকাও অনেক। এ রকম মহড়ার বেশির ভাগ রাশিয়ায় এবং কিছু চীন ও কাজাখস্তানে অনুষ্ঠিত হবে। পরে কাজাখস্তান, বেলারুশ, ইরান, আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ায়ও একবার করে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হবে।

সিঙ্গাপুরের এ রাজারাথনাম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সামরিক অধ্যয়নের অধ্যাপক মাইকেল রাস্কা বলেন, (অন্য দেশকে) কৌশলগত নির্ভরশীলতা তৈরি করতে অস্ত্র রপ্তানিকে চীন তাদের পররাষ্ট্রনীতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এর উদাহরণ, অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মতো এশিয়ার দেশগুলোতে চীন তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়িয়েছে।